রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুতের মিটারের সিল কেটে অবৈধ মিটার স্থানান্তর চক্রের মুলহোতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) মাদারিপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়মতুল্লাহর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, উল্টো ঘটনা ধাঁমাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণ পল্লী বিদ্যুৎ অভিযোগ করেছেন অপরাধীর শাস্তির জন্য। কিন্ত্ত পুলিশ এখানো কোনো তদন্তই করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৪ মার্চ অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো গ্রাহককে মিমাংসা করার নির্দেশ দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবুর বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এতে দুই গ্রাহক বিচার তো পাইনি উল্টো চরম বেকায়দায় পড়েছেন। ফলে অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জোর দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী দুই গ্রাহকসহ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্যাডে ১৯৬ নম্বর স্বারকের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জাহাঙ্গীর পিতা জয়মতুল্লাহ সাং মাদারিপুর, উক্ত ব্যক্তি তানোর জোনাল অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অবৈ ভাবে বৈদ্যুতিক মিটার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করে দিচ্ছেন। যেমন হিসাব নম্বর ৪৬৪-২৬২০ গ্রাহকের নাম আব্দুর রশিদ পিতা বদের আলী ও হিসাব নম্বর ৪৬৪-২৬৫০ গ্রাহক বদের আলী পিতা মাশি উভয়ের গ্রাম, ধানোরা। এ দু’জন গ্রাহকের আবাসিক মিটার অফিসকে অবহিত না করে অবৈধভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করে দিয়েছেন। যা বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিত বৈদ্যুতিক স্থাপনা/ইক্যুইপমেন্টে দন্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির ধানোরা গ্রামের রশিদ ও তার পিতা বদের আলীর ঘর ওয়ারিং শেষে মিটারের সিল কেটে অন্যত্র স্থানান্তর করেন জাহাঙ্গীর। বিদ্যুৎ বিল দেয়ার জন্য মিটার রিডার এসে এ অবস্থা দেখে গ্রাহককে জিজ্ঞেস করেন কে করেছে মিটারের এ অবস্থা। গ্রাহকরা বলেন জাহাঙ্গীর। মিটার রিডার বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পর ডিজিএম ওই দুজন গ্রাহককে অফিসে তলব করেন এবং মিটারের সিল কাটার বিষয়টি ডিজিএমকে খুলে বলেন। এ সময় দুজন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দেন ডিজিএম বরাবর। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিজিএম থানায় লিখিত অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই তানোর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইলেক্ট্রিশিয়ান লিটন অধিক টাকার বিনিময়ে এবং কর্তৃপক্ষের নাম করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দিতেন। ঘটনা বুঝতে পেরে এবং টাকার বিষয়টি প্রমান পাওয়ায় তাকে পল্লী বিদ্যুৎ তানোর জোনাল অফিস থেকে বহিষ্কার করেন । লিটন এখনো বহিষ্কার অবস্থায় আছেন। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার বড় ভাই একই কায়দায় বৈদ্যুতিক মিটার টাকার বিনিময়ে স্থানান্তর করে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর ও লিটন তারা দুই ভাই পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে এখন মুর্তিমান আতঙ্ক। তারা আরো বলেন, তাদের কথা মতো তাদের দিয়ে কাজ না করালে তারা গোপণে রাঁতের আঁধারে মিটারের সিলকাটা, সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ নানাভাবে সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি তারা আপোষ-মিমাংসা করে নিয়েছেন। তবে পুলিশ তদন্ত করে কি পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তাকে বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা দুই ভাই ষড়যন্ত্রের
শিকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা (ডিজিএম) জহুরুল ইসলাম বলেন, তারা থানায় অভিযোগ করেছেন অপরাধীর শাস্তির জন্য, এখানে আপোষের কথা আসছে কেন ? আর বাদি পল্লী বিদ্যুৎ তারা আপোষ করলো কার সঙ্গে।
প্রিন্ট