যশোরে পুলিশ ফাঁড়ির ভিতরে বিশেষ পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে মারধরের ঘটনায় মানববন্ধন করেছে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি। একই দিন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল।
এদিকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে করে বিশেষ পিপি মুকুলের অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
দুপুর ১২ টায় প্রেসক্লাব যশোরের শহিদ সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর মুকুল ফুটপাতের দোকানদারদের কাছ থেকে হিস্যা খায়। এর সাথে আরও একজন সিনিয়র আইনজীবীও সরাসরি জড়িত। ওই ফুটপাতে শাহীন নামে আমার দলীয় এক কর্মী দোকান দিতে গেলে তাকে বাঁধা দেয়া হয়। পরে পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে ডাকা হলে আমি তাকে সেখানে যেতে বলি। সেখানে যাওয়ার পর পিপি মুকুল ওই দোকানদার শাহীনকে বেদম মারপিট করে। খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। থানার ওসি ফোন করে জানায়, যা হওয়ার হয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি। আমি তাকে মারপিট করিনি। মুকুল আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, পিপি মুকুল আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমরাও পাল্টা মামলা করবো। কারণ শাহীন নামে ওই কর্মীকে বেদম মারপিট করেছে পিপি মুকুল। তার মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে। এ সময় ভুক্তভোগী দোকানদার শাহীনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুপুর ২টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্ত্তজা ছোট ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম. ইদ্রিস আলীর সাথে বৈঠকে বসেছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল আদালতে মামলা করায় সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করবেন বলে আইনজীবী নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন সূত্রে জানা গেছে।
যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে মারপিটের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দুই জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল নিজে বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন কোতয়ালি থানার ওসিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী সৈয়দ কবির হোসেন জনী। মামলার অপর আসামি শাহিন যশোর শহরের ঘোপ পিলু খান সড়কের বাসিন্দা।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির ২ নম্বর ভবনের সামনের ফুটপাতে কিছু ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী টেবিল পেতে কাপড় বিক্রি করেন। সেখানে এক ব্যবসায়ীকে জোর করে উঠিয়ে অন্য একজনকে বসায় শাহীন নামে এক ব্যক্তি। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশে তিনি এ টেবিল বসিয়েছেন। এটা কেউ ওঠালে তার হাত কেটে নেয়া হবে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ পার্শ্ববর্তী কসবা পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দেন। গত ৯ জুন রাতে পুরাতন কসবা ফাঁড়ির এসআই হেলাল মীমাংসার জন্য শাহীনসহ অন্য ব্যবসায়ীদের ডেকে পাঠান, একই সাথে বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে ফাঁড়িতে ডেকে নেয়া হয়। হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন একদল যুবক নিয়ে ফাঁড়িতে যান। তিনি মুস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে ধান্দাবাজি করিস উল্লেখ করে মারপিট শুরু করেন। এ সময় বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল থানায় মামলা করতে গেলে কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।
বিশেষ পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে আইনজীবী সমিতি ১ নম্বর ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। তারা ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবু মোর্ত্তজা ছোট, সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী জুলু, সৈয়দ কবির হোসেন জনী প্রমুখ।
প্রিন্ট