ঈদকে সামনে রেখে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে মৌসুমী বাস কাউন্টার বসিয়ে সুবিধাবাদী একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তার শুরু করেছে। এই চক্রে স্থানীয় সরকার দলীয় কতিপয় নেতা, জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক নেতা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চক্রটি রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে রুট পারমিটবিহীন শত শত যাত্রীবাস এনে দৌলতদিয়া ঘাটের অস্থায়ী কাউন্টার থেকে যাত্রী পরিবহন করে। এ সকল বাসের অধিকাংশের থাকে না ফিটনেস। চক্রটি তাদের চাহিদা মেটাতে ঈদে ঘরমূখো যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন-তিনগুন হারে ভাড়া আদায় করে থাকে। উপরোন্তু ফিটবিহীন গাড়ীগুলো পথে পথে বিকল হয়ে ও নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তোলে। স্থানীয় প্রশাসনে অভিযোগ দিয়েও এ বিষয়ে মেলে না যথাযথ ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ হলরুমে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় সভায় উপরোক্ত অভিযোগ করেন ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিবুর রহমান সুজন ও রাজবাড়ী জেলা বাস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী।
তারা আরো বলেন, আমরা সারা বছর অনেক লোকসানের মধ্য দিয়েই রাজবাড়ী ও ফরিদপুর রুটে যাত্রী পরিবহন করে থাকি। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে আমরা একটু ব্যবসা করবো সে সুযোগ আমাদের থাকে না। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি।
এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলাচল, লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন বক্তা।
এ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত সভায় উপস্থিত গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার বলেন, ঈদের সময় দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমূখো মানুষের বাড়তি চাপ সামাল দিতে দৌলতদিয়া ঘাটে অনেক আগে থেকেই অস্থায়ী মৌসুমী কাউন্টার স্থাপন করা হয়ে থাকে। এ সকল কাউন্টার থেকে যেন কোনরূপ যাত্রী হয়রানী ও অস্বাভাবিকহারে ভাড়া আদায় না করা হয় সে বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখবো।
সভার সভাপতি গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, মৌসুমী কাউন্টারের বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চ ও এর চালকদের প্রয়োজনীয় পেপারস তার কাছে জমা দিতে মালিক সমিতিকে নির্দেশ দিয়েছি। যাত্রী সাধারণের নির্বিঘ্নে পারাপার ও বাড়ী পৌছাতে ঘাট এলাকায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোতায়েন করা হবে নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এছাড়া পশুবাহী গাড়ী পারাপারের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নির্বিঘ্নে সেগুলো পার হচ্ছে। যে কোন ধরণের চাঁদাবাজী ঠেকাতে পশুবাহী গাড়ীগুলোর উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
সভায় গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শফিকুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিসির স্থানীয় ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএথর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সহিদুল ইসলাম, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর বাস-মালিক সমিতির বাবু মানিক চৌধুরী মিঠু, আনিছুর রহমান খান মো. আবু দাউদ রিজু, লঞ্চ মালিক সমিতির প্রতিনিধি, পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রিন্ট