ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকদের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক মারামারি ও বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দু পক্ষের লোকজন পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
চতুর্থ ধাপে গত বুধবার (৫জুন) বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা যুবলীগের সদস্য শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটুর (ঘোড়া প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়ার (দোয়াত কলম) এর মধ্যে। পরে এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বিজয়ী হোন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পূর্ববাইখীর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হকের ছেলে আহাদ দোয়াত কলমের সমর্থক ছিলেন। অপর দিকে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী লিটু শরীফের ভাই বাবলু শরীফ ও তাদের সমর্থীত চতুল ইউনিয়নের লিয়াকত মেম্বর শতাধিক লোকজন নিয়ে (৬ জুন) রাতে একাধিক বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বাদী হয়ে ৪০ জনকে আসামী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অপরদিকে কুলসুম বেগম বাদী হয়ে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাদ মোল্যা ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক ছিলেন। (৬জুন) সকালে তার ঘরের টিনে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে চার পাঁচ স্থানে কেটে ও ছিঁড়ে ফেলেছে মোস্তাফিজুর রহমান লালচাঁদ গ্রুপের লোকজন। এনিয়ে আজাদ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আজাদ জানান, ঘোড়া প্রতীকের কাজ করাতে আমাদের নানা রকমের হুমকি-ধামকি দিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এখন নিরাপদহীন ভাবে বসবাস করছি। কখনযে আবার মারামারি লেগে যাবে তা আল্লাহ জানে। অপর দিকে দোয়াত কলম সমর্থকের লোকজন একই ইউনিয়নের বেড়াদী গ্রামের ঘোড়া প্রতীকের সমর্থক মো. জাহিদুর রহমান (৫২), মামুন ফকির, কালাম ফকিরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। সাবেক সেনা সদস্য কুদ্দুসকে ধাওয়া দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মারামারির ভয়ে এলাকা ছাড়া রয়েছে কুদ্দুর ও তাঁর স্ত্রী।
সাতৈর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের হুকুমে তাঁর ছোট ভাই ইনামুল মোল্যা ও তার লোকজন গিয়ে বেড়াদী গ্রামের মো. হাসেম মোল্যার ছেলে ফারুক মোল্যাকে মারধর করে গুরুত্বর আহত করে, এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করে বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। এনিয়ে ফারুকের ভাই নাজমুল মোল্যা ১৪ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫। একই গ্রামের ইয়াসিন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৪।
ইনামুল এ বিষয়ে বলেন, আমার দলের শফিকুল নামের একজনকে মারধর করে ফারুক ও তার লোকজন। পরে শফিকুলের পরিবারের লোকজন এসে ফারুককে মারপিট করেছে শুনেছি। তবে আমি এঘটনা ঘটার পরে জানতে পেরেছি। আমার নামে ও আমার ভাই সাতৈর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমানকে পেঁচিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে এর তিব্র নিন্দা জানাই। এর পেছনে বিএনপির লোকজনের হাত রয়েছে। তারা ইশার ইঙ্গিতে আমাদের ক্ষতি করছে। সেই সাথে কৌশলো আওয়ামী লীগের সংগঠনের লোকজনদের বিচ্ছিন্ন করার পায়তারা শুরু করেছে। আমাদের এলাকায় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যা নিয়ে মামলা হয়।
বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বেড়াদী গ্রামের মারামারির ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ৪জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা নং ১৪ ও ১৫। বাইখীর ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা জেনে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট