ঢাকা , সোমবার, ০৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চির শান্তির অঘোর ঘুমে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন

বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কথাসাহিত্যিক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, প্রাবন্ধিক ও কবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দীন হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রজিউন)। ২০ মে সোমবার বিকাল ৪টা ৪ মিনিটে যশোর ক্যান্টনমেন্টস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহনাজ রাহানা রত্না দৈনিক ‘জয় বাংলা’কে জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়া তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরো জানান, সিটিস্ক্যান রিপোর্টে বাবার ব্রেইন ড্যামেজ ধরা পড়েছিল। এ ছাড়া তার ফুসফুসে পানি জমে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলাকালীন সোমবার বিকাল নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বরেণ্য এই কথাশিল্পী।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা পৌর শহরের কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কলিম উদ্দিন এবং মাতা আছিরন নেসা। ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ‘সাহিত্য ভবন’ নামের বাড়িতে সহধর্মিণী হাসিনা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। তিনি দুই পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ঝিকরগাছা ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিক। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম কবিতা কলকাতার দৈনিক পত্রিকা ‘লোকসেবক’ এ প্রকাশিত হয়।

 

পরবর্তীতকালে ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা প্রকাশ হওয়া শুরু করে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেন ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কারে ভুষিত হন। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। হোসেনউদ্দীন হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। এগুলো হলো যশোরাদ্যদেশ (১৯৭৪), যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৪)- ১ম খন্ড, যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৯)- ২য় খন্ড, অমৃত বৈদেশিক (১৯৭৫), ভলতেয়ার ফবেয়ার কলসত্ব ত্রয়ী উপন্যাস ও যুগমানস (১৯৮৮), ঐতিহ্য আধুনিকতা ও আহসান হাবীব (১৯৯৪), বাংলার বিদ্রোহ (২০০৩) ১ম খন্ড, বাংলার বিদ্রোহ (২০০৬) ২য় খন্ড, নষ্ট মানুষ উপন্যাস (১৯৭৪), প্লাবন এবং একজন উপন্যাস (১৯৭৯), সাধুহাটির লোকজন উপন্যাস (২০০১), ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাস (২০০৮), সোনালি জলের কাঁকড়া উপন্যাস (২০১১), সমাজ সাহিত্য দর্শন প্রবন্ধ (২০১০), রণেত্র সারাবেলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি (২০১২), লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্তী (২০১২), উনাশির শ্রেষ্ঠ গল্প সম্পাদনা (১৯৭৯) এবং মরাল সম্পাদনা (২০০৮ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে)।

 

প্রসঙ্গত, সাহিত্য চর্চায় হোসেনউদ্দীন হোসেনের ঝুলিতে রয়েছে নানা সম্মাননা এবং পুরস্কার। এর মধ্যে চাঁদের হাট পদক-১৯৯০, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মৃতি পদক-১৯৯৬, বিজয় দিবস পদক-১৯৯৭, মাইকেল মধুসূদন একাডেমি পদক-২০০১, কলকাতা বিধান নগর (সল্টলেক) মেলা পদক-২০০৪, কন্ঠশীলন সম্মাননা পদক-২০০৬, গুনীজন সম্মাননা পদক- ২০০৬, এম, এল হাই স্কুল সম্মাননা পদক-২০০৬, ক্যামব্রিজ স্বর্ণপদক (ইংল্যান্ড)- ২০০৬, কপোতাক্ষ সম্মাননা পদক-২০০৭, আয়েশা জব্বার সম্মাননা পদক-২০০৭, বিবর্তন আজীবন সম্মাননা পদক-(ঢাকা) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক-(যশোর ইনস্টিটিউট) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক- (মণিরামপুর) ২০০৮, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মাননা পদক- ২০১০, শিমুল পলাশ সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩, লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩। হোসেনউদ্দীন হোসেনের ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ উপন্যাসটি ভারতে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পাঠ্য।

 

 

হোসেন উদ্দীন হোসেন ৬০ এর দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেরে গ্রহণ করেন। কিছুকাল তিনি দৈনিক সংবাদে কাজ করেন। এক বছর পর এই পেশা থেকে সরে সাহিত্য সেবায় যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৮ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘নতুন দেশ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। পেশায় হোসেনউদ্দীন হোসেন আপাদমস্তক একজন কৃষক হলেও পৃথিবীর নানা দেশ তিনি অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্যের নেশায়।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

চির শান্তির অঘোর ঘুমে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন

আপডেট টাইম : ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কথাসাহিত্যিক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, প্রাবন্ধিক ও কবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দীন হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রজিউন)। ২০ মে সোমবার বিকাল ৪টা ৪ মিনিটে যশোর ক্যান্টনমেন্টস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহনাজ রাহানা রত্না দৈনিক ‘জয় বাংলা’কে জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে গলব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়া তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরো জানান, সিটিস্ক্যান রিপোর্টে বাবার ব্রেইন ড্যামেজ ধরা পড়েছিল। এ ছাড়া তার ফুসফুসে পানি জমে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলাকালীন সোমবার বিকাল নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বরেণ্য এই কথাশিল্পী।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা পৌর শহরের কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কলিম উদ্দিন এবং মাতা আছিরন নেসা। ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ‘সাহিত্য ভবন’ নামের বাড়িতে সহধর্মিণী হাসিনা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। তিনি দুই পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের জনক। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ঝিকরগাছা ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিক। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম কবিতা কলকাতার দৈনিক পত্রিকা ‘লোকসেবক’ এ প্রকাশিত হয়।

 

পরবর্তীতকালে ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা প্রকাশ হওয়া শুরু করে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

 

হোসেনউদ্দীন হোসেন ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কারে ভুষিত হন। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। হোসেনউদ্দীন হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। এগুলো হলো যশোরাদ্যদেশ (১৯৭৪), যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৪)- ১ম খন্ড, যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৯)- ২য় খন্ড, অমৃত বৈদেশিক (১৯৭৫), ভলতেয়ার ফবেয়ার কলসত্ব ত্রয়ী উপন্যাস ও যুগমানস (১৯৮৮), ঐতিহ্য আধুনিকতা ও আহসান হাবীব (১৯৯৪), বাংলার বিদ্রোহ (২০০৩) ১ম খন্ড, বাংলার বিদ্রোহ (২০০৬) ২য় খন্ড, নষ্ট মানুষ উপন্যাস (১৯৭৪), প্লাবন এবং একজন উপন্যাস (১৯৭৯), সাধুহাটির লোকজন উপন্যাস (২০০১), ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাস (২০০৮), সোনালি জলের কাঁকড়া উপন্যাস (২০১১), সমাজ সাহিত্য দর্শন প্রবন্ধ (২০১০), রণেত্র সারাবেলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি (২০১২), লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্তী (২০১২), উনাশির শ্রেষ্ঠ গল্প সম্পাদনা (১৯৭৯) এবং মরাল সম্পাদনা (২০০৮ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে)।

 

প্রসঙ্গত, সাহিত্য চর্চায় হোসেনউদ্দীন হোসেনের ঝুলিতে রয়েছে নানা সম্মাননা এবং পুরস্কার। এর মধ্যে চাঁদের হাট পদক-১৯৯০, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মৃতি পদক-১৯৯৬, বিজয় দিবস পদক-১৯৯৭, মাইকেল মধুসূদন একাডেমি পদক-২০০১, কলকাতা বিধান নগর (সল্টলেক) মেলা পদক-২০০৪, কন্ঠশীলন সম্মাননা পদক-২০০৬, গুনীজন সম্মাননা পদক- ২০০৬, এম, এল হাই স্কুল সম্মাননা পদক-২০০৬, ক্যামব্রিজ স্বর্ণপদক (ইংল্যান্ড)- ২০০৬, কপোতাক্ষ সম্মাননা পদক-২০০৭, আয়েশা জব্বার সম্মাননা পদক-২০০৭, বিবর্তন আজীবন সম্মাননা পদক-(ঢাকা) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক-(যশোর ইনস্টিটিউট) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক- (মণিরামপুর) ২০০৮, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মাননা পদক- ২০১০, শিমুল পলাশ সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩, লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩। হোসেনউদ্দীন হোসেনের ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ উপন্যাসটি ভারতে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের পাঠ্য।

 

 

হোসেন উদ্দীন হোসেন ৬০ এর দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেরে গ্রহণ করেন। কিছুকাল তিনি দৈনিক সংবাদে কাজ করেন। এক বছর পর এই পেশা থেকে সরে সাহিত্য সেবায় যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৮ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘নতুন দেশ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। পেশায় হোসেনউদ্দীন হোসেন আপাদমস্তক একজন কৃষক হলেও পৃথিবীর নানা দেশ তিনি অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্যের নেশায়।