ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। সেবা নিতে গেলে সেবাপ্রার্থীদের প্রতিটি পদে পদে কর্তাবাবুকে দিতে হচ্ছে ঘুষ। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে সেবা থেকে।
উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তহশিলদার শরিফুল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা। ইচ্ছেমতো সময় নিয়ে ও অতিরিক্ত টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজই করেন না বলে অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহীতারা।
অভিযোগে জানা যায়, মোকারিমপুর ভূমি অফিসে তহশিলদার শরিফুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকেই সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এখানে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে ঘুস দেওয়ার পরও কাজ হয় না। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতে তাদের নথিপত্র পর্যন্ত গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে। নামজারি, খারিজ, খাজনা প্রদানসহ অন্যান্য কাজে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘুস-দুর্নীতির মহোৎসব প্রকাশ্যেই চলছে এই ভূমি অফিসে।
ভুক্তভোগীরা জানান, মোকারিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সব কাগজপত্র সঠিক থাকলেও ১১৭০ টাকার খারিজ করতে সেবাপ্রত্যাশীকে পরিশোধ করতে হয় সর্বনিম্ন ৫ থেকে ৮হাজার টাকা।
এই অফিসে তহশিলদার শরিফুল ইসলামের অনিয়মই নিয়ম। সরকার কর্তৃক ভূমি খারিজের ফি ১১৭০ টাকা নির্ধারণ করলেও খাজনার দাখিলার জন্য (ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ) সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু রসিদ দেওয়া হয় সরকারি হিসাবেই। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা। দৌরাত্ম বেড়েছে দালাল সিন্ডিকেটেরও।
দেখা গেছে, ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়সহ সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হলেও জমির পর্চা (খসড়া) তোলাসহ সব কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে ভূমি অফিসে। নিরীহ ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই ভূমি কর্মকর্তার দুর্নীতি রোধে দুদকের হস্তক্ষেপ জরুরি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভূমি কর্মকর্তা বলেন, দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দা হচ্ছেন মোকারিমপুর ইউনিয়নের তহশিলদার শরিফুল ইসলাম। দৌলতপুর ছাড়াও ভেড়ামারার বিলশুকা ও কুষ্টিয়ার মজমপুরে তার অনেক গুলো বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি রয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকেই ম্যানেজ করে চলেন তাই অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, সেবা নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তি এর আগেও একাধিকবার এসেছেন। তহশিলদার শরিফুল ইসলাম সেদিনও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে সরজমিনে সাংবাদিক উপস্থিতি দেখে কয়েকজনের কাজ করে দেন এবং শরিফুল সাংবাদিকদের ছবি তুলে রাখেন। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, আমি লিখতে পারি, লিখাতেও পারি।
স্থানীয়রা জানান, শরিফুলের টার্গেট অসহায় ও দরিদ্র কৃষক। তার নিকট কেউ কাজের জন্য গেলে নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে বাড়িতে লোক দিয়ে কাজ করাবে বলে অতিরিক্ত টাকা নেয়। যা নেয় তার অর্ধেকেরও কম রশীদ করে। ৩০০ টাকার কমে একটি পর্চাও মেলে না। তহশিলদার শরিফুল ইসলাম মোকারিমপুর ভূমির তহশিলদার হিসেবে টানা ৬ বছর ধরে নানা অনিয়ম ও দূনীর্তি করে আসছেন। দেখার কেউ নেই। কিছু বললেই বলে উপরে লোক আছে, কিচ্ছু হবে না আমার।
ক্ষেমিড়দিয়ার থেকে আসা মালেকা খাতুন বলেন, গত তিন দিন থেকে এখানে ঘুরছি। এখনো কোনো কাজ হয়নি।
আরেক ভুক্তভোগী সামিরুন বেগম বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজের জন্য টাকা দিয়েছি। এখনো আমার কোনো কাজ হয়নি।
বাহাদুরপুরের কৃষক জমিন মণ্ডল বলেন, আমি তহশিলদারকে (শরিফুল) জমি খারিজের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। আর সে দাখিলা কেটেছে ৭ হাজার ৩০০ টাকার। বাদ বাকি টাকা তার পকেটে ভরেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মোকারিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষের কারবার চলছে সমানতালে। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘুষ লেনদেন! এখানে দালালদের সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি থাকার কথা স্বীকার করলেও শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো অনিয়ম দুর্নীতি করি না। একটি ছেলে দিয়ে বাড়িতে কাজ করাই। তাকেও আমি বেতন দেই।
অভিযোগের বিষয়ে তহশিলদার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই জানি না। ভূমি অফিস দালাল, ঘুস, দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।
- আরও পড়ুনঃ ভেড়ামারাতে একটি ডাবের দাম ১৬০ টাকা !
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসাইন বলেন, শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।