কুষ্টিয়া সদরে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু আহাদ আল মামুনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। তাকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সোমবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার বড় স্টেশনের সামনে কবি আজিজুর রহমান সড়কের লিটন খার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মামুনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৮মে, প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মামুন অভিযোগ করে বলেন, রাতে কুষ্টিয়া শহরের বড় স্টেশন রোডে অবস্থিত আমার নির্বাচনী অফিসে বসেছিলাম। এ সময় কয়েকজন যুবক এসে আমাকে বাইরে আসতে বলে। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে মারধর করে বাইরে টেনে নিয়ে যায়। বাইরে নিয়ে তারা আমাকে জিজ্ঞাসা কওে ভোটে কেন দাঁড়াইছিস, কে দাঁড়াইতে বলেছে। আমি কিছু বলার আগেই তারা আমার মাথা, বুকে, পিঠে আঘাত করে। আমাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় আমি জগৎ ও হাসিব খাঁর নাম শুনেছি।
প্রার্থীর মামাতো ভাই তিতাস বলেন, পৌর ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগতের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন এই হামলা চালিয়েছে। মারধরের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারালে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে তাঁকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির শরীরের কোথাও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তাঁকে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষ জগতকে ফোন কল করলে দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দধি মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে চেয়ারম্যান প্রার্থী জনতা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আবু আহাদ আলম মামুন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ বিষয়ে ওই প্রার্থী তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট দিয়ে ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কথা জানান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে যারা হামলার সঙ্গে জড়িত তারা দলের বা তাঁর কোনো কর্মী সমর্থক নয় বলে দাবি করেন বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিদ্বন্দ্বী আতাউর রহমান আতা বলেন, মনে হচ্ছে তিনি মার খাওয়ার নাটক করেছেন। তার চশমা ঠিক আছে, মোবাইল হাতেই রয়েছে। তবে কেউ যদি হামলা করে থাকেন তার দায় আমি নেব না।
যিনি আমার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন তিনি কোনো শক্ত প্রার্থী নন। তাহলে আমার দলের নেতাকর্মী বা সমর্থকেরা কেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আমার দলের কেউ নয়, তাদের আমি চিনিও না।
এদিকে, খবর পেয়ে আহত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মামুনকে দেখতে হাসপাতালে যান কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সোহেল রানাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি এবং তার চিকিৎসায় সহায়তা করি। আমরা তার সাথে কথা বলেছি। উনিসহ ৭/৮ জন ব্যক্তি একসাথে বসে ছিলেন। এ সময় তার ওপর হামলা করা হয়েছে বলে উনি (আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী) জানিয়েছেন। উনি সবাইকে চিনতে পারেননি। উনি দুয়েকজনের নাম বলেছেন। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সোহেল রানা বলেন, হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট