ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ফরিদপুরে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত Logo লালপুরে ভুট্টা ক্ষেত থেকে কবিরাজের লাশ উদ্ধার Logo পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণাকারী গ্রেফতার Logo শালিখার আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা Logo ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ Logo ফরিদপুরের ধর্ষণ মামলার আসামী সোহেল গ্রেপ্তার Logo পাংশায় শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের সাধারণ সভায় নতুন কমিটি Logo কুষ্টিয়ায় উলামা সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত Logo নির্বাচন ছাড়া কোন সরকার দীর্ঘদিন থাকলে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারেরা জন্ম নেয়ঃ -আব্দুস সালাম Logo ভেড়ামারায় মাজারে মাদকবিরোধী অভিযান, ভক্তদের হাতে লাঞ্ছিত ম্যাজিস্ট্রেট
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

অসুস্থ পিতাকে দেখতে চাওয়ায় পাষণ্ড স্বামীর হাতে লাশ হলো স্ত্রী

অশীতিপর মৃত্যু পথযাত্রী পিতাকে দেখতে বাপের বাড়ি যেতে চাওয়ায় এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে লাশ হতে হলো দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধুকে। অবশেষে বাপের বাড়িতে এলেও জীবিত নয় অ্যাম্বুলেন্সের খাটিয়ায় লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী পলাতক রয়েছে।

 

নিহত গৃহবধূর নাম বিথি বেগম (৩৫)। সে উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের রতন সেখের মেয়ে। রবিবার ২৮ এপ্রিল বিকালে ওই গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পিতার বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

 

জানা যায়, ১৫ বছর আগে একই উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের তামারহাজি গ্রামের নজির সেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সেখের সাথে বিথি বেগমের বিয়ে হয়।

 

বিথি বেগমের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বিথির অশীতিপর বৃদ্ধ পিতা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু পথযাত্রী। এ খবর পেয়ে পিতাকে দেখতে বাপের বাড়ি আসতে চায় সে। ভূসম্পত্তি ও যৌতুক লোভী স্বামী সাখাওয়াত হোসেন এতে বাধ সাধে। এ নিয়ে বিথি বেগম জেদ ধরলে তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাষাণ স্বামী। এ সময় বিথি বেগমের তলপেটে লাথির আঘাতে শরীরের অভ্যন্তরিণ রক্তক্ষরণ ঘটে জননেন্দ্রিয় দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে সে অচেতন হয়ে পড়েন।

 

এ সময় তাকে মৃত ভেবে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ঘরে থাকা কীটনাশক স্ত্রীর মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিথি বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার।

 

গৃহবধূর চাচাতো-ভাই সজল সেখ জানান, চাকুরির সুবাদে আমি ফরিদপুর অবস্থান করি। আমার ছোট ভাই ফোন করে জানায়, বিথিকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি মেডিকেলে ছুটে যাই, তখনও তারা পৌঁছায়নি। তারা পৌঁছানোর পরেই আমি বোনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এসময় আমার বোনজামাই সহ অন্যান্য আত্মীয়রা পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও বিষের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে আমার বোনের মৃত্যু হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

 

নিহত গৃহবধূর মা দোলেনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন- আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। বোন নাজমা বেগম জানায়- ৯ ভাই বোনের মধ্যে বিথি ছোট, আমার একমাত্র ভাই প্রতিবন্ধি।

 

বিথিকে তার স্বামী সাখাওয়াত প্রায় নির্যাতন করতো। নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ফোনে কান্নাকাটি করতো। এর আগেও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমার বোন বিষপান করতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে এটাই তার প্রমাণ।

 

 

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা জানান- মৃতদেহর সুরতহাল করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

 

 

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো শহিদুল ইসলাম বলেন – এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

অসুস্থ পিতাকে দেখতে চাওয়ায় পাষণ্ড স্বামীর হাতে লাশ হলো স্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

অশীতিপর মৃত্যু পথযাত্রী পিতাকে দেখতে বাপের বাড়ি যেতে চাওয়ায় এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে লাশ হতে হলো দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধুকে। অবশেষে বাপের বাড়িতে এলেও জীবিত নয় অ্যাম্বুলেন্সের খাটিয়ায় লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে।স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী পলাতক রয়েছে।

 

নিহত গৃহবধূর নাম বিথি বেগম (৩৫)। সে উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের রতন সেখের মেয়ে। রবিবার ২৮ এপ্রিল বিকালে ওই গৃহবধূর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পিতার বাড়িতে নিয়ে এলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

 

জানা যায়, ১৫ বছর আগে একই উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের তামারহাজি গ্রামের নজির সেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সেখের সাথে বিথি বেগমের বিয়ে হয়।

 

বিথি বেগমের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বিথির অশীতিপর বৃদ্ধ পিতা বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু পথযাত্রী। এ খবর পেয়ে পিতাকে দেখতে বাপের বাড়ি আসতে চায় সে। ভূসম্পত্তি ও যৌতুক লোভী স্বামী সাখাওয়াত হোসেন এতে বাধ সাধে। এ নিয়ে বিথি বেগম জেদ ধরলে তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাষাণ স্বামী। এ সময় বিথি বেগমের তলপেটে লাথির আঘাতে শরীরের অভ্যন্তরিণ রক্তক্ষরণ ঘটে জননেন্দ্রিয় দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে সে অচেতন হয়ে পড়েন।

 

এ সময় তাকে মৃত ভেবে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ঘরে থাকা কীটনাশক স্ত্রীর মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিথি বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার।

 

গৃহবধূর চাচাতো-ভাই সজল সেখ জানান, চাকুরির সুবাদে আমি ফরিদপুর অবস্থান করি। আমার ছোট ভাই ফোন করে জানায়, বিথিকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি মেডিকেলে ছুটে যাই, তখনও তারা পৌঁছায়নি। তারা পৌঁছানোর পরেই আমি বোনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, এসময় আমার বোনজামাই সহ অন্যান্য আত্মীয়রা পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও বিষের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে আমার বোনের মৃত্যু হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

 

নিহত গৃহবধূর মা দোলেনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন- আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। বোন নাজমা বেগম জানায়- ৯ ভাই বোনের মধ্যে বিথি ছোট, আমার একমাত্র ভাই প্রতিবন্ধি।

 

বিথিকে তার স্বামী সাখাওয়াত প্রায় নির্যাতন করতো। নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে ফোনে কান্নাকাটি করতো। এর আগেও তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমার বোন বিষপান করতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে এটাই তার প্রমাণ।

 

 

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা জানান- মৃতদেহর সুরতহাল করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।

 

 

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো শহিদুল ইসলাম বলেন – এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রিন্ট