ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুমারখালীর সেই ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করলো বন বিভাগ

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের জোর আপত্তি এবং সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর কুষ্টিয়ায় সামাজিক বন বিভাগের আওতায় রোপন করা ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করলো বন বিভাগ। এর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁধবাজার-মাদুলিয়া পর্যন্ত সড়কের এসব গাছ কাটতে নাম্বারিং ও দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ।

এ বিষয় নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড়সহ স্থানীয়দের ঘোরতর আপত্তিতে অবশেষে গাছ কাটা থেকে সরে এসেছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ।

জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। ১০ বছর আগে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করে বনবিভাগ।

এসব গাছের দশ বছর পূর্ণ হওয়ায় প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার জন্য উপজেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সুপারিশ ও জেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির অনুমোদনক্রমে গত ৩ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। দরপত্রে ২১৭টি লটের মধ্যে ১৪৫টি সরকার নির্ধারিত রেটে আওতায় পড়েছে। প্রতিটি লটে গাছ রয়েছে ১৫০/২০০টি।

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, জনসাধারণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফলে বন বিভাগ আপাতত গাছ কাটা কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

গাছ কাটা কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে বন বিভাগ জানায়, সরকারি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গাছ কাটার আয়োজন করা হলেও প্রচণ্ড তাপদাহের এই সংকটকালে তা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় জানান, পরিবেশের রক্ষা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যত্রতত্র গাছ কাটা জনজীবনসহ পরিবেশের জন্য চরম হুমকি। দেশের ভৌগোলিক সীমানার ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজন হলেও আমাদের রয়েছে মাত্র ৯ ভাগ। গাছ আমাদের ছায়া-অক্সিজেন দানসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে নির্বিচারে গাছ কর্তনে সামাজিক বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ জানান, সরকারি সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই গাছ কাটার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপাতত গাছ কাটা কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া-সান্দিয়ারা সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার দরপত্র জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় গাছ কাটার প্রকল্পটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার সান্দিয়ারা-লাহিনীপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ।

 

দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। আবারো নতুন করে এ ৩ হাজার গাছ কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কুমারখালীর সেই ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করলো বন বিভাগ

আপডেট টাইম : ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের জোর আপত্তি এবং সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর কুষ্টিয়ায় সামাজিক বন বিভাগের আওতায় রোপন করা ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করলো বন বিভাগ। এর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁধবাজার-মাদুলিয়া পর্যন্ত সড়কের এসব গাছ কাটতে নাম্বারিং ও দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ।

এ বিষয় নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড়সহ স্থানীয়দের ঘোরতর আপত্তিতে অবশেষে গাছ কাটা থেকে সরে এসেছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ।

জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। ১০ বছর আগে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করে বনবিভাগ।

এসব গাছের দশ বছর পূর্ণ হওয়ায় প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার জন্য উপজেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সুপারিশ ও জেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির অনুমোদনক্রমে গত ৩ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। দরপত্রে ২১৭টি লটের মধ্যে ১৪৫টি সরকার নির্ধারিত রেটে আওতায় পড়েছে। প্রতিটি লটে গাছ রয়েছে ১৫০/২০০টি।

এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, জনসাধারণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফলে বন বিভাগ আপাতত গাছ কাটা কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

গাছ কাটা কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে বন বিভাগ জানায়, সরকারি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গাছ কাটার আয়োজন করা হলেও প্রচণ্ড তাপদাহের এই সংকটকালে তা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গৌতম কুমার রায় জানান, পরিবেশের রক্ষা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যত্রতত্র গাছ কাটা জনজীবনসহ পরিবেশের জন্য চরম হুমকি। দেশের ভৌগোলিক সীমানার ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজন হলেও আমাদের রয়েছে মাত্র ৯ ভাগ। গাছ আমাদের ছায়া-অক্সিজেন দানসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে নির্বিচারে গাছ কর্তনে সামাজিক বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ জানান, সরকারি সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই গাছ কাটার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রচণ্ড তাপদাহসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপাতত গাছ কাটা কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া-সান্দিয়ারা সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার দরপত্র জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় গাছ কাটার প্রকল্পটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার সান্দিয়ারা-লাহিনীপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করেছিল উপজেলা বনবিভাগ।

 

দরপত্রের মাধ্যমে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। আবারো নতুন করে এ ৩ হাজার গাছ কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।