রাজশাহীর তানোরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী মেলায় সমন্বয়হীনতা ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদর্শনী মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানের খামারিরা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলা আয়োজন করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রদর্শনীর জন্য দুই লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।কিন্ত্ত গুটিকয়েক খামারিকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নামমাত্র এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
এদিকে প্রদর্শনী উপলক্ষে ছিলো না কোনো প্রচার-প্রচারণা। ফলে মেলায় কাঙ্ক্ষিত দর্শকের দেখা মেলেনি। অথচ অনুষ্ঠানটি ব্যাপক প্রচারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও অনেকেই বলেন প্রচারের জন্য কোনো মাইকিং বা ঢোল সহরত শোনা যায়নি।
এদিকে প্রদর্শনী স্থলে ৫০টি স্টলের বিপরীতে বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু প্রদর্শনীতে স্বল্প পরিসরে মাত্র ৩০টি স্টল বসানো হয়। এছাড়াও ৫০টি স্টলের পশুর জন্য ২২০ টাকা হারে খাবারের পাত্র বাবদ বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ৩০টি স্টলে খাবারের পাত্র দেখা যায় অল্প সংখ্যক। পশুর খাবার বাবদ বরাদ্দ, ছিল ১০ হাজার টাকা। তবে দেখা যায়, মেলায় আসা প্রাণীকে শুধু কিছু ঘাস খেতে দেওয়া হয়েছিল। সব বিষয়েই ছিল প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়সারা হিসেব।
ওদিকে দুপুরের খাবার বাবদ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্থানীয় একটি হোটেল থেকে ৩০০ প্যাকেট বিরিয়ানি (প্যাকেটপ্রতি ১২০ টাকা ব্যয়) ও আমন্ত্রিত ৩০ জন অতিথির জন্য আলাদাভাবে সবজি, মাছ, মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেখানেও গাফিলতি পাওয়া যায়। এমনকি অনুষ্ঠান স্থলে আসা অনেকেই খাবার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন খামারিকে পুরস্কার হিসাবে স্বাক্ষর ও টাকা না লিখেই ফাঁকা চেক প্রদান করা হয়। বিষয়টি খামারিরা উপস্থিত অতিথিদের জানালে পরে তাদের স্বাক্ষর ও টাকা উল্লেখ করে চেক প্রদান করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও মাঠকর্মী বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে।
এমনকি অফিসে বিলম্বে আসা ও অফিস ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া এক খামারী বলেন, ‘সেই সকাল বেলা গরু লিয়া আসোচি, গরুকে খালি একনা শুকান খাবার দেওচে। তিনি বলেন, ‘গরুর খাবার নাই জানলে হামি মেলাত গরু লিয়া আসতুন না। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা, ওয়াজেদ আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তবে প্রাণী সম্পদ সেবা ও প্রদর্শনী মেলার বরাদ্দের তিনি কোনো সুনিদ্রিষ্ট তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রদর্শনী আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। এরপরও এবারও আয়োজনে একই অবস্থা, যা কেবল দায়সারা গোছের। অথচ প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য সরকারিভাবে যথেষ্ট বরাদ্দ ছিলো।