ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কালুখালীতে গনঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরনসভা Logo কুষ্টিয়ায় আসামিদের ধরতে সাংবাদিক ইউনিয়নের মানববন্ধন Logo সদরপুরে বিএডিসি’র নকল লোগোযুক্ত ধানের বীজ বিক্রয়ের দায়ে জরিমানা Logo আলফডাঙ্গায় বাড়িতে ঢুকে স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ জনকে কুপিয়ে জখম Logo পেট্রাপোল-বেনাপোলে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং এর কার্যক্রম শুরু Logo নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী বাঁধাঘাট দখল মুক্ত করে সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন Logo প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, দলীয় ঐক্য গড়ুনঃ -আরিফ-শাকিল Logo নড়াইলে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে মাদকবিরোধী সেমিনার অনুষ্ঠিত Logo কুষ্টিয়ায় ট্রলির ধাক্কায় ননদ-ভাবি নিহত Logo বোয়ালমারীতে ফাঁসির পলাতক আসামী গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

মোটিভ উদঘাটন॥ মূল হোতা রনি

পাংশায় চাঞ্চল্যকর শিশু মুরসালীন হত্যা মামলায় দাদা-নাতি গ্রেফতার

পাংশায় গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে শিশু মুরসালীন হত্যা মামলার আসামী দাদা-নাতি দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউপির সাঁজুরিয়া গ্রামের চাঞ্চল্যকর শিশু মুরসালীন (৬) হত্যা মামলার আসামী মুরসালীনের আপন চাচাতো ভাই শাকিল আহমেদ অরফে রনি (১৫) ও দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডলকে (৬২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার ২০মে দিবাগত রাতে সাঁজুরিয়া গ্রাম থেকে হাবিবুর রহমান মন্ডল ও রনিকে গ্রেফতার করা হয়। রনির পিতার নাম নজরুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমান মন্ডলের পিতার নাম মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডল। হাবিবুর রহমান মন্ডলের ৩ ছেলে। নবাব আলী (কৃষক), নজরুল ইসলাম (প্রবাসী) ও নাজিম উদ্দিন (চাকুরীজীবী)। রনি প্রবাসী নজরুলের ছেলে। আসামী হাবিবুর রহমান মন্ডল ও রনি সম্পর্কে তারা দাদা-নাতি।

জানা যায়, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জুয়েল রানাসহ সঙ্গীয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করে।

অপহৃত শিশু মুরসালীন। -ছবি সংগৃহীত।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন আসামীদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধারের ৪৮ঘন্টার মধ্যে ঘটনার মোটিভ উদঘাটনসহ জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আসামীরা শুক্রবার ২১মে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। ওসি মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন আরও জানান, শিশু মুরসালীনের লাশ উদ্ধারের পরে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে কিশোর অপরাধী শাকিল আহমেদ রনি ও তার দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডল গ্রেফতার পূর্বক থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রনির দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গত ১৬ মে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে মুরসালীন তাদের বাড়িতে এসে রনির ছোট ভাই আরিয়ানের সাথে খেলা করছে। তখন সে মুখ মুছতে মুছতে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়।

মুরসালীনও তার সাথে বাইরে যায়। ওই সময় রনির চাচা নবাব মন্ডল জমি দেখে বাড়ি ফেরার পথে মুরসালীনকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। মুরসালীন বাড়ি যেতে রাজি হয়নি। নবাব মন্ডল একাই তার বাড়িতে ফেরেন। মুরসালীন পুনরায় রনিদের বাড়ির মধ্যে যায়। কিছুক্ষণ পরে রনি বাড়িতে গিয়ে দেখে আরিয়ানের সাথে মুরসালীন খেলা করছে।

খেলতে খেলেতে মুরসালীন আরিয়ানকে চওড় মারে। চওড মারা দেখে রনি মুরসালীনকে চওড় মারলে মুরসালীন পাশের দেওয়ালের সাথে লেগে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। তখন রনি তাড়াতাড়ি করে মুরসালীনকে পাশে থাকা হাফ পানিভরা বালতিতে নিয়ে রাখে। তারপর মুরসালীনকে পানি থেকে তুলে সাদা বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে বস্তা পুনরায় বালতির ভিতর রাখে। বালতিটি লাল রঙের। ঘরের পেছনে দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডলের টয়লেট আছে, টয়লেটের পিছনে হাউজ আছে। হাউজের উপরে বাঁশের চাটাই আছে। চাটাইয়ের ভিতরে বালতি রাখে এবং চাটাইয়ের উপরে ছেড়া জাল রাখে।

এছাড়া হাবিবুর রহমান মন্ডলের স্বীকারোক্তিতে ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গত ১৯ মে সকালে হাবিবুর রহমান মন্ডলের স্ত্রী কাঞ্চন মালা বাথরুমের সামনে গেলে কিসের যেন গন্ধ পায়। তখন বিষয়টি কাঞ্চন মালা হাবিবুর রহমান মন্ডলকে জানায়।

তিনি বাথরুমের পিছনে যেয়ে দেখে বালতির মধ্যে একটা বস্তা। বস্তার মুখ খোলা ছিল। বস্তার ভিতরে মুরসালীনের লাশ। তখন তিনি তার স্ত্রীর অগোচরে মুরসালীনের লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় বাড়ির উত্তর পার্শ্বে বছিরের পাটক্ষেতে নিয়ে ফেলে আসে এবং পরে বালতি ভেঙ্গে মাহাতাব খানের পাটক্ষেতের পূর্ব পার্শ্বের ভিতরে রেখে আসে।

এরআগে শিশু মুরসালীন অপহরণের অভিযোগে তার পিতা নবাব আলী মন্ডল বাদি হয়ে পাংশা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১২, ধারা মানব পাচার আইনের ১০(১)/৩০২/২০১/৩৪ দ.বি.।

প্রসঙ্গতঃ গত রবিবার সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে (সরিষা-হোসেনডাঙ্গা বাজার সড়ক) পাকা রাস্তার উপর থেকে শিশু মুরসালীন অপহৃত হয় বলে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর গত বুধবার নবাব মন্ডলের বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশু মুরসালীনের বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কালুখালীতে গনঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরনসভা

error: Content is protected !!

মোটিভ উদঘাটন॥ মূল হোতা রনি

পাংশায় চাঞ্চল্যকর শিশু মুরসালীন হত্যা মামলায় দাদা-নাতি গ্রেফতার

আপডেট টাইম : ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মে ২০২১
মোঃ মোক্তার হোসেন, পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধিঃ :

রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউপির সাঁজুরিয়া গ্রামের চাঞ্চল্যকর শিশু মুরসালীন (৬) হত্যা মামলার আসামী মুরসালীনের আপন চাচাতো ভাই শাকিল আহমেদ অরফে রনি (১৫) ও দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডলকে (৬২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার ২০মে দিবাগত রাতে সাঁজুরিয়া গ্রাম থেকে হাবিবুর রহমান মন্ডল ও রনিকে গ্রেফতার করা হয়। রনির পিতার নাম নজরুল ইসলাম এবং হাবিবুর রহমান মন্ডলের পিতার নাম মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডল। হাবিবুর রহমান মন্ডলের ৩ ছেলে। নবাব আলী (কৃষক), নজরুল ইসলাম (প্রবাসী) ও নাজিম উদ্দিন (চাকুরীজীবী)। রনি প্রবাসী নজরুলের ছেলে। আসামী হাবিবুর রহমান মন্ডল ও রনি সম্পর্কে তারা দাদা-নাতি।

জানা যায়, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জুয়েল রানাসহ সঙ্গীয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করে।

অপহৃত শিশু মুরসালীন। -ছবি সংগৃহীত।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন আসামীদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধারের ৪৮ঘন্টার মধ্যে ঘটনার মোটিভ উদঘাটনসহ জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আসামীরা শুক্রবার ২১মে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। ওসি মোহাম্মাদ শাহাদাত হোসেন আরও জানান, শিশু মুরসালীনের লাশ উদ্ধারের পরে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে কিশোর অপরাধী শাকিল আহমেদ রনি ও তার দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডল গ্রেফতার পূর্বক থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রনির দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গত ১৬ মে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে মুরসালীন তাদের বাড়িতে এসে রনির ছোট ভাই আরিয়ানের সাথে খেলা করছে। তখন সে মুখ মুছতে মুছতে বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়।

মুরসালীনও তার সাথে বাইরে যায়। ওই সময় রনির চাচা নবাব মন্ডল জমি দেখে বাড়ি ফেরার পথে মুরসালীনকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। মুরসালীন বাড়ি যেতে রাজি হয়নি। নবাব মন্ডল একাই তার বাড়িতে ফেরেন। মুরসালীন পুনরায় রনিদের বাড়ির মধ্যে যায়। কিছুক্ষণ পরে রনি বাড়িতে গিয়ে দেখে আরিয়ানের সাথে মুরসালীন খেলা করছে।

খেলতে খেলেতে মুরসালীন আরিয়ানকে চওড় মারে। চওড মারা দেখে রনি মুরসালীনকে চওড় মারলে মুরসালীন পাশের দেওয়ালের সাথে লেগে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। তখন রনি তাড়াতাড়ি করে মুরসালীনকে পাশে থাকা হাফ পানিভরা বালতিতে নিয়ে রাখে। তারপর মুরসালীনকে পানি থেকে তুলে সাদা বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে বস্তা পুনরায় বালতির ভিতর রাখে। বালতিটি লাল রঙের। ঘরের পেছনে দাদা হাবিবুর রহমান মন্ডলের টয়লেট আছে, টয়লেটের পিছনে হাউজ আছে। হাউজের উপরে বাঁশের চাটাই আছে। চাটাইয়ের ভিতরে বালতি রাখে এবং চাটাইয়ের উপরে ছেড়া জাল রাখে।

এছাড়া হাবিবুর রহমান মন্ডলের স্বীকারোক্তিতে ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, গত ১৯ মে সকালে হাবিবুর রহমান মন্ডলের স্ত্রী কাঞ্চন মালা বাথরুমের সামনে গেলে কিসের যেন গন্ধ পায়। তখন বিষয়টি কাঞ্চন মালা হাবিবুর রহমান মন্ডলকে জানায়।

তিনি বাথরুমের পিছনে যেয়ে দেখে বালতির মধ্যে একটা বস্তা। বস্তার মুখ খোলা ছিল। বস্তার ভিতরে মুরসালীনের লাশ। তখন তিনি তার স্ত্রীর অগোচরে মুরসালীনের লাশ বস্তাবন্দি অবস্থায় বাড়ির উত্তর পার্শ্বে বছিরের পাটক্ষেতে নিয়ে ফেলে আসে এবং পরে বালতি ভেঙ্গে মাহাতাব খানের পাটক্ষেতের পূর্ব পার্শ্বের ভিতরে রেখে আসে।

এরআগে শিশু মুরসালীন অপহরণের অভিযোগে তার পিতা নবাব আলী মন্ডল বাদি হয়ে পাংশা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১২, ধারা মানব পাচার আইনের ১০(১)/৩০২/২০১/৩৪ দ.বি.।

প্রসঙ্গতঃ গত রবিবার সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে (সরিষা-হোসেনডাঙ্গা বাজার সড়ক) পাকা রাস্তার উপর থেকে শিশু মুরসালীন অপহৃত হয় বলে অভিযোগ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর গত বুধবার নবাব মন্ডলের বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশু মুরসালীনের বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।


প্রিন্ট