বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার চাহিদা বেড়েছে সুতি পোশাকের। ক্রেতাদের কথা মাথায় নিয়ে দোকানিরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন সুতির পোশাককে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের। সকাল থেকে দোকানিরাও ব্যস্ত বেচা-বিক্রিতে।
গতকাল ভেড়ামারার বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঈদ কেনাকাটা করতে ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। জামা-কাপড়ের পসরা সাজিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। রাত ১২টা পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে প্রচন্ড ভীড় দেখা গেছে।
ক্রেতাদের পদচারণায় জমজমাট ছিল কাপড়ের দোকানগুলো। কিনছেন তাদের পছন্দসই কাপড়। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে দোকানগুলোতে। শহরের বিভিন্ন দোকানের বিক্রেতারা জানান শুরুর দিকে তেমন ভিড় হয়নি। গত শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় বেড়েছে সকাল থেকেই।
পোশাকের ডিজাইনেও এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। গরমের কথা মাথায় রেখে চাহিদা বেড়েছে সুতি পোশাকের। আরামদায়ক সুতি পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখন ক্রেতাদের সাথে আর বাড়তি কথা বলতে হচ্ছে না বিক্রেতাদের।
তবে ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো এবারও দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা জানান, ভিড় এড়াতে শুরুর দিকে শপিংয়ে এসেও স্বস্তি নেই। প্রতিটি পোশাকেই বাড়তি দাম হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের জন্য ১৫শ’ টাকা দিয়ে একটি পাঞ্জাবি কিনে খুশি বলে জানান, কালাই ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজাউল করিম।
বিভিন্ন মাপের গামের্ন্টস পোশাক শিশুদের জন্য বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। থ্রি পিস ১৫শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চায়না বস্ত্রলায়ের মালিক হিটলার জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রমজানের শুরু থেকে মোটামুটি বেচাবিক্রি বেড়েছে। আগে যেমন ১৫ রমজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত, এবার তা উল্টো।
মোশারফ গামের্ন্টস পোশাক ব্যবসায়ী জানান, অন্যবারের তুলনায় এবার সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যেই পছন্দসই কাপড়ই কিনছেন। এবার পাইকারি বাজারে কাপড়ের দাম বেশি বলেও জানান তিনি। দেশিয় শাড়ির মধ্যে সিল্ক, কাতান ও টাঙ্গাইলের শাড়ির চাহিদার পাশাপাশি গাউন, থ্রিপিস ও বেবী সেট মেয়েদের পোশাকের চাহিদা এবার বেশি।
এদিকে সাতকাহ পোষাক গামের্ন্টস পাশাপাশি জমে উঠেছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসার ফুটপাতের দোকানগুলো। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষগুলো ঈদের কেনাকাটা সারছেন এ দোকানগুলোতেই।
ফুটপাতের দোকানদার তছলিম উদ্দিন বলেন, প্রথমদিকে বেচাবিক্রি না হলেও ১৫ রমজানের পর বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ব্যবসা নিম্ন আয়ের লোকজনদের সাথে। আর দিন যতই ঘুনিয়ে আসবে ততই বেচাবিক্রি বাড়বে। ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যেই আমাদের বেচাবিক্রি। আমরাই নিম্ন আয়ের মানুষের সর্বশেষ ভরসা। যেভাবে বেচাবিক্রি হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত হলে মোটামুটি লাভ টিকবে।
ফুটপাতে মেয়ের জামা ক্রয় করতে এসে বানিহারা গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, মার্কেটে গিয়ে কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। ঈদ বলে কথা, নিজের না হউক, ছেলে-মেয়েদের জন্য অন্তত এসব দোকানে জামা-কাপড় কিনছি। ৪৫০ টাকায় বড় মেয়ের জন্য এবং ২৭০ টাকায় ছোট ছেলের জন্য জামা কিনেছি। এখন আমাদের জন্য না হলেও আর কোনো সমস্যা নেই। ছেলে-মেয়ের জন্যই এতকিছু।
আতিয়ার টেইলার্সের মালিক আতিয়ার বলেন, এই ঈদে গামের্ন্টস কাপড় বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। তারপরেও অতিরিক্ত আয়ের আশায় জয়পুরহাটের অনেক কারিগর ঢাকাতে চলে যায়।
ফলে কারিগরের অভাবে সময় মত কাপড় ডেলিভারী দেওয়ার স্বার্থে বেশি কাপড় বুকিং নেওয়া সম্ভব হয় না। এবার সেলাইয়ের জন্য সার্ট প্রতি ৪৫০-৫০০ টাকা, প্যান্ট ও পাঞ্জাবী সেলাই প্রতিটি সাড়ে ৪০০ টাকা মজুরী নেওয়া হচ্ছে। টেইলার্সের শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
- আরও পড়ুনঃ বোয়ালমারীতে বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, এমনিতেই সার্বিক আইনশৃংলা ভালো। তারপরেও ঈদের কেনাকাটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রিন্ট