গতকাল নগরীর আগ্রাবাদের বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেলে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয় জিম্মি ২৩ নাবিকদের স্বজনদের।
সেই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারোয়ার জাহান ও শাহরিয়ার জাহান, এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যাপ্টেন মেহেরুল করিম, কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খুলনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল ও নেত্রকোনা থেকে নাবিকদের স্বজনরা এতে যোগ দেন। এ ছাড়া এমভি জাহান মনিতে যেসব নাবিক আটক ছিলেন, তাদেরও এতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ইফতারে যোগ দেওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভির আহমেদের মা জোছনা বেগম গতকাল রাতে বলেন, ‘আমি ও আমার ছেলের বউসহ তিনজন ইফতারে যোগ দিই। এখানে নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।’
কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে জোছনা বেগম বলেন, ‘আমাদের বলেছে নাবিকদের নিয়ে কোনো চিন্তা না করতে। শিগগিরই তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে। ফোন করলে নাবিকদের সাহস দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছেন ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বড় ভাই ওমর ফারুক রাজু। তিনি বলেন, ‘কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ আমাদের সান্তনা দিয়েছে। বলেছে, শিগগিরই আমরা আপনাদের আপনজনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসব।’
সোমালিয়ান জলদস্যুরা গত বুধবার প্রথম দফায় যোগাযোগের পর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। জিম্মি মুক্তির বিষয়টি কীভাবে হবে, নাবিকদের কীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে, জাহাজ ও জাহাজের পণ্য কীভাবে ছাড়া পাবে, জিম্মিকালীন জাহাজের নাবিকদের খাবার খরচ, জাহাজের জ্বালানি খরচসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনার জায়গা রয়েছে।
তবে এসব আলোচনা করতে বেশি সময় লাগার কথা নয় বলে জানান বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নাবিকদের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তির বিষয়ে মালিকপক্ষ খুবই সজাগ। তারা দস্যুর এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যেভাবে তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়, সে কাজটি করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১০ সালে এমভি জাহান মনিকেও তারা উদ্ধার করে আনতে পেরেছিল। তাই এই জাহাজের ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে না আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, এখানে মূলত জিম্মিকারীরা টাকা দাবি করে। আর মালিকপক্ষ অনেকগুলো হিসাব মিলিয়ে জিম্মিকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষি করে। এসব করতে বেশিদিন সময় লাগে না।
তবে দস্যুর এজেন্টদের সঙ্গে কোনোভাবেই তড়িঘড়ি করার সুযোগ নেই বলে জানান নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় হবে জাহাজ ও নাবিক মুক্তির বিষয়ে কত টাকা নেবে? এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।’
এদিকে জাহাজের প্রিন্সিপাল অফিসার আতিক উল্লাহ খান গত শুক্রবার তার বোনজামাই ওমর ফারুকের সঙ্গে প্রায় দুই মিনিট মোবাইলে কথা বলেছেন। ওমর ফারুক বলেন, ‘আতিক উল্লাহ খান জানিয়েছেন জাহাজে পানির সমস্যা হচ্ছে। আর সবাই সুস্থ আছে। তিনি পরিবারের স্বজনদের খবর নিয়েছেন।’ দস্যুদের অবস্থা কিংবা ওখানকার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এমন কিছু বলেননি। তবে বলেছেন তাদের সব সময় জাহাজের ব্রিজে (জাহাজ পরিচালনার কক্ষ) এনে রাখা হয়। আর সবাইকে একসঙ্গে রাখা হয়।’
জিম্মিদের উদ্ধারে মালিকপক্ষের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কেএসআএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এমভি জাহান মনি ১০০ দিন লাগলেও এবার আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়। হয়তো শিগগিরই এমন কোনো সুখবর পাওয়া যেতেও পারে।’
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের টহল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি থাকায় এটা দস্যুদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যদিও দস্যুরা অনেক শক্তিশালী তারপরও তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এটা কিন্তু এক ধরনের মাইন্ড গেম।’
তবে এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি থাকলেও অভিযান চালানোর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে আগেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মাকসুদ আলম। কারণ সমুদ্র আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের পতাকাবাহী জাহাজে অভিযান চালাতে হলে অবশ্যই সেই দেশের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুযায়ী অনুমোদনহীনভাবে অভিযান চালানো যাবে না।
গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি করা হয় এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যারাকাদে নোঙর করে। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।