রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প কৃষিক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্ত্ত রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (তানোর জোন) একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে বিএমডিএ’র সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, তানোর পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতিবাজ একশ্রেণীর কর্মকর্তার নেপথ্যে যোগসাজশে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিএমডিএর কমান্ড এরিয়ায় ও বাসাবাড়িতে খাবার পানির নামে মটর স্থাপন করে আবাসিক সংযোগ নিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমিতে সেচ দিচ্ছে এতে বিএমডিএর সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। তানোর পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বিষয়টি
দেখেও এসব অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিযোগীতা মুলকভাবে অবৈধ মটর স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। একশ্রেণীর মটর মালিক বাড়িতে খাবার পানির জন্য বৈদ্যুতিক মটর স্থাপন করে অধিক মুনাফার আশায় অবৈধভাবে গভীর নলকূপ স্কিমের জমিতে সেচ দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন মটর স্কিমে সেচ পানির মূল্য নিয়ে প্রতিনিয়ত মটর মালিকের সঙ্গে কৃষকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেচ নীতিমালা অনুযায়ী বিএমডিএর গভীর নলকূপের প্রায় (এক হাজার ৩শ’ মিটার) কমান্ড এরিয়ার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সেচ মটর স্থাপন করা যাবে না, আর বিদ্যুৎ সংযোগের তো প্রশ্নই আসে না। অথচ তানোরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে খাবার পানির জন্য বৈদ্যুতিক মটর স্থাপন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কৃষি জমিতে সেচ দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) কুন্দাইন গ্রামের ইউসুফ আলী শিবপুর মৌজায় ডিপের কমান্ড এরিয়ায় একটি পুকুর পাড়ে মৎস্যচাষের নামে মিনি ডিপ স্থাপন করেছেন।কিন্ত্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করে আন্ডারগ্রাউন্ড নির্মাণ করে স্কীমে সেচ বাণিজ্যে করছেন। ব্যক্তিগত মটর হওয়ায় তিনি নিজের ইচ্ছেমতো সেচ চার্জ আদায় করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, ড্রেন মেরামত, ভোল্টেজ বাড়ানো নানা অজুহাতে কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এতে কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।তবে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) শসানতলা গ্রামের শাহজাহান আলী তার বাড়ি থেকে আবাসিক সংযোগ দিয়ে সেচ বানিজ্যে করছে। কৃষকেরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা সরাসরি নৌকার বিপক্ষে ভোট দিতে কৃষকদের বাধ্য করেছে। যারা নৌকায় ভোট দিবেন তাদের জমিতে সেচ দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। ফলে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান তানোর পল্লী বিদ্যুৎ যথারীতি এসব অবৈধ মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে জরিমানার নামে বাণিজ্য করছে। অথচ সেচ নীতিমলা অনুয়ায়ী খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া হলে সেই মটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা। এসব অবৈধ মটরের কারণে বিএমডিএ’র অধিকাংশ গভীর নলকুপ লেয়ার ফেল করে অকেজো হয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নাই আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না এমনকি খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না। এব্যাপারে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর এরিয়া ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরুল ইসলাম বলেন, খাবার পানির মটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।#
প্রিন্ট