ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ক্যাপসিকামে বাজিমাত সবুজের

জমির পরিমাণ মাত্র ৬০ শতক। চারিদিকে নেট দিয়ে ঘেরা, উপরেও নেটের ছাউনি। প্রত্যন্ত গ্রামে এভাবে নেট দিয়ে আবদ্ধ করে চাষ করা হচ্ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় ক্যাপসিকাম। চাষ তো দুরের কথা, এখনো গ্রামের মানুষ এর নামটাও ঠিকমতো জানে না। কিভাবে খেতে হয়, কোথায় কিভাবে বিক্রি হয়, তা না জানলেও প্রথমবার ক্যাপসিকাম চাষ করেই বাজিমাত করেছে কৃষক সবুজ।

নিজ নামের সঙ্গেই মিল রেখে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জঙ্গলী কৃষি ব্লকের কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ আলী চাষ করেছেন সবুজ রঙ এর ক্যাপসিকাম জাত অরবিট। মাত্র দুই মাসেই বিক্রি করেছেন লাখ টাকা। আশা করছেন, তিন মাসেই তার সাত লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করবেন।

উদ্ভট, পাগলামি, জমি নষ্ট, ফালতু জিনিষ, ফল হবে কিন্তু খরচ উঠবে না- এমন নানা কথা শুনতে হয়েছে সবুজকে। এখন তার সাফল্য দেখে অন্য চাষীদের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছেন তিনি। ইতোপূর্বে ওই এলাকার মানুষ ক্যাপসিকাম চাষ সর্ম্পকে জানতো না। এখন প্রতিদিনই ভীড় করেন তার জমিতে ক্যাপসিকাম দেখতে এবং চাষ শিখতে।

খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। বাজারে সবুজ, লাল, হলুদ এই তিন রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া এতে ভিটামিন বি, ই, কে, থিয়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি পাওয়া যায়।

সবুজ ক্যাপসিকাম একটু অল্প বয়সীদের জন্য উপকারী। এতে ক্যাপসাইসিনস নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা ডিএনএ’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। মাইগ্রেন, সাইনাস, সংক্রমণ, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি ব্যথা দূর করে এই ক্যাপসিকাম।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুরুতে ক্যাপসিকাম চাষের ভিডিও দেখেন কৃষক সবুজ। পরে তিনি যোগাযোগ করেন কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসে। সেখান থেকে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবার চাষ শুরু করেন তিনি।

এদিকে নেটে ঘেরা ফসলের ক্ষেতের মাঝে হলুদ-সাদা পোঁকা মারার ফাঁদ। মাটিতে পলিথিন বেছানো। সবুজ গাছে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে অসংখ্য ক্যাপসিকাম। এটি দেখতে স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা মানুষও ভীড় করছেন প্রতিনিয়ত।

সবুজ জানান, মোবাইলে কৃষি বিষয়ে ভিডিও দেখতে দেখতে ক্যাপসিকামের ভিডিও আসে। সেটা দেখি এবং চাষ করার চিন্তা করি। কিন্তু এটা কিভাবে চাষ করে সেটা জানতাম না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসে যায়। সেখানে তারা আমাকে ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। কিছুদিন পরে আমি যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে তিনদিনের নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিই।

সেখানে কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়া এবং কম পানিতে কিভাবে সবজি চাষ করা যায়, সে সর্ম্পকে জানতে পারি। একই সঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কেও জানতে পারি। এরও কিছুদিন পরে আমাকে ২০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম করার জন্য প্রদর্শনী দেন তারা। কিন্তু আমি তার সঙ্গে আরও ৪০ শতাংশ যোগ করে প্রথমবার ৬০ শতাংশ জমিতে এ ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করি।

তিনি বলেন, ভালোভাবে জমি চাষ করে অক্টোবর মাসের দিকে ক্যাপসিকামের চারা রোপণ করি। ৬০ শতাংশ জমিতে আমি ৬ হাজার ৫০০টির মতো চারা লাগিয়েছি। লাইন অনুযায়ি দুইটি গাছের মাঝে নিদ্দিষ্ট দুরত্ব রেখে এ চারা রোপণ করতে হয়।  জমিতের যাতে পোঁকামাকড় ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই নেট ব্যবহার করেছি। এতে পাখিরও কোন উপদ্রব নেই। সেই সাথে পানি সেচের অপচয় কমাতে আমি মালচিং ব্যবহার করেছি। এর কারনে আমার জমিতে আগাছা হয়নি এবং সার ও পানি সেচ কম লাগছে। চাষের খরচও অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি কোন প্রকার কিটনাশক দেয়নি। পোঁকা দমনের জন্য কৃষি অফিসের দেওয়া হলুদ ও সাঁদা আঠাযুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য ক্যাপসিকামের চারা, মালচিং পেঁপার, বাঁশ-খুটি, নেট ও সার দিয়েছিলো। এছাড়া সব মিলিয়ে আমার মোট ২ লাখ ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ক্যাপসিকাম তোলা শুরু করেছি। বেশ ভালো হয়েছে এবং ফলগুলোও বেশ বড় বড় হয়েছে। এখন পর্যন্ত জমি থেকে এক হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছি।

সবুজ বলেন, কুষ্টিয়া শহরে ১৮০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। গড়ে ২০০ টাকা ধরে হলেও দুই লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি। এখনো যে পরিমাণ ফল আছে, তাতে আরও দুই হাজার কেজি মতো তোলা যাবে। আশা করছি ৫-৭ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো।

ক্যাপসিকাম বিক্রি নিয়ে সমস্যার কথাও জানান সবুজ। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ তো এটা চেনে না। আমি স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য চার কেজি দিয়েছিলাম এক দোকানে। এটা কিভাবে খেতে হয় সেটা বলতে বলতে ওই দোকানী বিরক্ত হয়ে গেছে। শহরে ছাড়া এটা বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব। বাজারে বরিশাল এলাকার ক্যাপসিকাম আসায় দাম একটু কমে যাচ্ছে।

চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্যাপসিকাম চাষ খুবই সহজ। আমরা যেমন মরিচ চাষ করি, ঠিক তেমনি। তবে একটু খেয়াল রাখতে হবে যাতে রোগবালাই না লাগে। আর যেহেতু এটা সালাদ বা কাঁচা খাওয়া যায় এজন্য কীটনাশক মুক্ত চাষ করা উচিৎ।

উক্ত এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, যখন সবুজ বললো যে এখানে ক্যাপসিকাম লাগাবো, তখন তো এর নামই মনে থাকতো না। এর আগে কোনদিন দেখা তো দুরের কথা, নামই শুনিনি। তবে যখন হলো, তখন সবাই দেখতে আসা শুরু করলো। এখন দেখছি এটা লাভজনক। আগামীতে এলাকায় আরও চাষ হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করণে এখানে জৈব উপায়ে চাষাবাদ করানোর চেষ্টা করছি। সবুজ নামের এই কৃষক নিরাপদ উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতের অবস্থা খুবই ভালো এবং তিনি বেশ লাভবান হবেন।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, কৃষি পরামর্শের পাশাপাশি নিরাপদ উপায়ে উচ্চ মুল্যের সবজি চাষে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়ে আসছি। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প এর আওতায় নিরাপদ সবজি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ ক্যাপসিকাম চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি পানি স্বাশ্রয়ী ও নিরাপদ উপায়ে এ ক্যাপসিকামের চাষ করছেন। বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক এখন ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি প্রকৌশলী ও যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের জুনিয়র পরামর্শক (ফার্ম ম্যানেজমেন্ট ও পানি ব্যবস্থাপনা) উম্মে উমারা জানান, মাটি থেকে পানি বাস্পয়িতভাবে বাতাশে উড়ে যায়। মালচিং পেঁপার ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি ফসলে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব। যার কারণে সেচ খরচ অনেকটা কমে যায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করলে কৃষকরা অনেক বেশি উপকৃত হবে।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, আমরা আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের স্বাশ্রয়ী পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে উচ্চ মুল্যের সবজি চাষে কৃষকদের বীজ-সার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। যার ফলে এই অঞ্চলের কৃষকরা আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

 

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, ক্যাপসিকাম উচ্চ মুল্যের একটি সবজি। কৃষকরা এটি চাষ করে বেশ ভাল লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় অনেক বেকার যুবকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে এই ক্যপসিকাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। আগামীতে এ ক্যাপসিকামের আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুপেয় পানির বুথ স্থাপন

error: Content is protected !!

ক্যাপসিকামে বাজিমাত সবুজের

আপডেট টাইম : ১১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৪

জমির পরিমাণ মাত্র ৬০ শতক। চারিদিকে নেট দিয়ে ঘেরা, উপরেও নেটের ছাউনি। প্রত্যন্ত গ্রামে এভাবে নেট দিয়ে আবদ্ধ করে চাষ করা হচ্ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় ক্যাপসিকাম। চাষ তো দুরের কথা, এখনো গ্রামের মানুষ এর নামটাও ঠিকমতো জানে না। কিভাবে খেতে হয়, কোথায় কিভাবে বিক্রি হয়, তা না জানলেও প্রথমবার ক্যাপসিকাম চাষ করেই বাজিমাত করেছে কৃষক সবুজ।

নিজ নামের সঙ্গেই মিল রেখে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জঙ্গলী কৃষি ব্লকের কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ আলী চাষ করেছেন সবুজ রঙ এর ক্যাপসিকাম জাত অরবিট। মাত্র দুই মাসেই বিক্রি করেছেন লাখ টাকা। আশা করছেন, তিন মাসেই তার সাত লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করবেন।

উদ্ভট, পাগলামি, জমি নষ্ট, ফালতু জিনিষ, ফল হবে কিন্তু খরচ উঠবে না- এমন নানা কথা শুনতে হয়েছে সবুজকে। এখন তার সাফল্য দেখে অন্য চাষীদের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছেন তিনি। ইতোপূর্বে ওই এলাকার মানুষ ক্যাপসিকাম চাষ সর্ম্পকে জানতো না। এখন প্রতিদিনই ভীড় করেন তার জমিতে ক্যাপসিকাম দেখতে এবং চাষ শিখতে।

খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। বাজারে সবুজ, লাল, হলুদ এই তিন রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া এতে ভিটামিন বি, ই, কে, থিয়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি পাওয়া যায়।

সবুজ ক্যাপসিকাম একটু অল্প বয়সীদের জন্য উপকারী। এতে ক্যাপসাইসিনস নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা ডিএনএ’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। মাইগ্রেন, সাইনাস, সংক্রমণ, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি ব্যথা দূর করে এই ক্যাপসিকাম।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুরুতে ক্যাপসিকাম চাষের ভিডিও দেখেন কৃষক সবুজ। পরে তিনি যোগাযোগ করেন কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসে। সেখান থেকে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবার চাষ শুরু করেন তিনি।

এদিকে নেটে ঘেরা ফসলের ক্ষেতের মাঝে হলুদ-সাদা পোঁকা মারার ফাঁদ। মাটিতে পলিথিন বেছানো। সবুজ গাছে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে অসংখ্য ক্যাপসিকাম। এটি দেখতে স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা মানুষও ভীড় করছেন প্রতিনিয়ত।

সবুজ জানান, মোবাইলে কৃষি বিষয়ে ভিডিও দেখতে দেখতে ক্যাপসিকামের ভিডিও আসে। সেটা দেখি এবং চাষ করার চিন্তা করি। কিন্তু এটা কিভাবে চাষ করে সেটা জানতাম না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসে যায়। সেখানে তারা আমাকে ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। কিছুদিন পরে আমি যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে তিনদিনের নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিই।

সেখানে কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়া এবং কম পানিতে কিভাবে সবজি চাষ করা যায়, সে সর্ম্পকে জানতে পারি। একই সঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কেও জানতে পারি। এরও কিছুদিন পরে আমাকে ২০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম করার জন্য প্রদর্শনী দেন তারা। কিন্তু আমি তার সঙ্গে আরও ৪০ শতাংশ যোগ করে প্রথমবার ৬০ শতাংশ জমিতে এ ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করি।

তিনি বলেন, ভালোভাবে জমি চাষ করে অক্টোবর মাসের দিকে ক্যাপসিকামের চারা রোপণ করি। ৬০ শতাংশ জমিতে আমি ৬ হাজার ৫০০টির মতো চারা লাগিয়েছি। লাইন অনুযায়ি দুইটি গাছের মাঝে নিদ্দিষ্ট দুরত্ব রেখে এ চারা রোপণ করতে হয়।  জমিতের যাতে পোঁকামাকড় ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই নেট ব্যবহার করেছি। এতে পাখিরও কোন উপদ্রব নেই। সেই সাথে পানি সেচের অপচয় কমাতে আমি মালচিং ব্যবহার করেছি। এর কারনে আমার জমিতে আগাছা হয়নি এবং সার ও পানি সেচ কম লাগছে। চাষের খরচও অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি কোন প্রকার কিটনাশক দেয়নি। পোঁকা দমনের জন্য কৃষি অফিসের দেওয়া হলুদ ও সাঁদা আঠাযুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য ক্যাপসিকামের চারা, মালচিং পেঁপার, বাঁশ-খুটি, নেট ও সার দিয়েছিলো। এছাড়া সব মিলিয়ে আমার মোট ২ লাখ ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ক্যাপসিকাম তোলা শুরু করেছি। বেশ ভালো হয়েছে এবং ফলগুলোও বেশ বড় বড় হয়েছে। এখন পর্যন্ত জমি থেকে এক হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছি।

সবুজ বলেন, কুষ্টিয়া শহরে ১৮০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ক্যাপসিকাম। গড়ে ২০০ টাকা ধরে হলেও দুই লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি। এখনো যে পরিমাণ ফল আছে, তাতে আরও দুই হাজার কেজি মতো তোলা যাবে। আশা করছি ৫-৭ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো।

ক্যাপসিকাম বিক্রি নিয়ে সমস্যার কথাও জানান সবুজ। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ তো এটা চেনে না। আমি স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য চার কেজি দিয়েছিলাম এক দোকানে। এটা কিভাবে খেতে হয় সেটা বলতে বলতে ওই দোকানী বিরক্ত হয়ে গেছে। শহরে ছাড়া এটা বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব। বাজারে বরিশাল এলাকার ক্যাপসিকাম আসায় দাম একটু কমে যাচ্ছে।

চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্যাপসিকাম চাষ খুবই সহজ। আমরা যেমন মরিচ চাষ করি, ঠিক তেমনি। তবে একটু খেয়াল রাখতে হবে যাতে রোগবালাই না লাগে। আর যেহেতু এটা সালাদ বা কাঁচা খাওয়া যায় এজন্য কীটনাশক মুক্ত চাষ করা উচিৎ।

উক্ত এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, যখন সবুজ বললো যে এখানে ক্যাপসিকাম লাগাবো, তখন তো এর নামই মনে থাকতো না। এর আগে কোনদিন দেখা তো দুরের কথা, নামই শুনিনি। তবে যখন হলো, তখন সবাই দেখতে আসা শুরু করলো। এখন দেখছি এটা লাভজনক। আগামীতে এলাকায় আরও চাষ হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করণে এখানে জৈব উপায়ে চাষাবাদ করানোর চেষ্টা করছি। সবুজ নামের এই কৃষক নিরাপদ উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতের অবস্থা খুবই ভালো এবং তিনি বেশ লাভবান হবেন।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, কৃষি পরামর্শের পাশাপাশি নিরাপদ উপায়ে উচ্চ মুল্যের সবজি চাষে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়ে আসছি। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প এর আওতায় নিরাপদ সবজি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাঞ্চনপুর এলাকার কৃষক সবুজ ক্যাপসিকাম চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি পানি স্বাশ্রয়ী ও নিরাপদ উপায়ে এ ক্যাপসিকামের চাষ করছেন। বাজারে ভালো দামও পাচ্ছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক এখন ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

কৃষি প্রকৌশলী ও যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের জুনিয়র পরামর্শক (ফার্ম ম্যানেজমেন্ট ও পানি ব্যবস্থাপনা) উম্মে উমারা জানান, মাটি থেকে পানি বাস্পয়িতভাবে বাতাশে উড়ে যায়। মালচিং পেঁপার ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি ফসলে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব। যার কারণে সেচ খরচ অনেকটা কমে যায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করলে কৃষকরা অনেক বেশি উপকৃত হবে।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, আমরা আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের স্বাশ্রয়ী পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে উচ্চ মুল্যের সবজি চাষে কৃষকদের বীজ-সার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। যার ফলে এই অঞ্চলের কৃষকরা আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

 

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, ক্যাপসিকাম উচ্চ মুল্যের একটি সবজি। কৃষকরা এটি চাষ করে বেশ ভাল লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় অনেক বেকার যুবকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে এই ক্যপসিকাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। আগামীতে এ ক্যাপসিকামের আবাদ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।