মানবাধিকার কর্মী কামরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে গতকাল ৯ জানুয়ারি ২০২৩ বোয়ালমারী চৌরাস্তায় স্থানীয় আওয়ামী ওলামা লীগের আহবানে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
মানবাধিকারকর্মী ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার এক্টিভিষ্ট হিসাবে স্থানীয়ভাবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারী ২০২৩ কামরুজ্জামান তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে দুটি পোস্টের কারণে স্থানীয় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি নামের একটি সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কামরুজ্জামান গত ৭ জানুয়ারী ২০২৩ তার ফেসবুক ওয়ালে উক্ত সংগঠন এর ১১ দফা দাবী সম্বলিত একটি স্ক্রিনশট পোষ্ট করেন যার মধ্যে অন্যতম দাবী ছিল, বাংলাদেশের সংবিধান থেকে “বিসমিল্লাহ”, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” এবং “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা” কথাগুলো বাদ দিতে হবে।
একই দিনের অন্য এক সময়ে তিনি ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট করেন যাতে উল্লেখ ছিল, “ধর্ম না মানার সাংবিধানিক অধিকার চাই”।
উক্ত পোস্ট দুটি স্থানীয় মুসলিম উগ্রপন্থী এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং কামরুজ্জামান এক পর্যায়ে পোষ্ট দুটি ফেসবুক থেকে অপসারণ করতে বাধ্য হন৷ কিন্তু তার ফেসবুক কাভার ফটোতে তিনি ১১ দফা দাবী সম্বলিত ব্যানারটি সংযুক্ত করেন যা এখনো দেখতে পাওয়া যায়।
বিক্ষোভ সমাবেশের প্রধান আয়োজক, সরকারী দল আওয়ামী লীগ এর ধর্মীয় উইং আওয়ামী ওলামা লীগ এর বোয়ালমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে কামরুজ্জামানের এরকম ধৃষ্ঠতা বরদাশত করা হবে না। তার এই পোস্ট দেশের সকল মুসলমানের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছে। কামরুজ্জামানকে তিনি ” নাস্তিক, মুরতাদ” আখ্যায়িত করে বলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এর দেশে নাস্তিকদের কোনো ঠাঁই নাই, তিনি তার ফাঁসির দাবী করেন।
কামরুজ্জামানকে তার বাসস্থানে না পেয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা থেকে তিনি জানান যে, তিনি জীবননাশের হুমকি পাচ্ছেন, তবে তিনি বিচলিত নন, তিনি তার বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হবেন না। স্থানীয় পুলিশকে তিনি তার বাস স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পান নি।
প্রিন্ট