ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo তানোর বিএনপির নেতৃত্বে হযরতকে দেখতে চাই তৃণমুল Logo মোহনপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা Logo ফরিদপুরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত Logo রূপগঞ্জে দুই সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ Logo আজ খোকসা হানাদার মুক্ত দিবসঃ পালিত হবে যথাযজ্ঞ মর্যাদা Logo দৌলতপুরে জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত Logo মধুখালীতে নবাগত ইউএনও’র যোগদান Logo বহুলীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বন্যা পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে করনীয় শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo শালিখায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত Logo প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬ দিনব্যাপী বিষয়ভিত্তিক বাংলা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আগাম জাতের ধান চাষে চাষি-শ্রমিক কারোই হাতটান পড়ছে না

মাজাকোমর পানির ওপর দুলছে হারানো ধানের সোনালী শিষ

হাইব্রিড ধান চাষ করে চোখেমুখে এখন আনন্দের ঝিলিক চাষিদের। চাষি-শ্রমিক কারোই হাতটান পড়ছে না। অন্যদিকে আধুনিক কৃষিব্যবস্থার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিচিত্র আর বাহারি নামের দেশি জাতের রকমরি ধান। অগ্রহায়ণের শস্যপ্রাপ্তিতে এক সময় আনন্দ দিত দাদখানি চাল কিংবা উড়কি ধানের মুড়কি হিসেবে প্রচলিত এসব ধান। এখন আর নেই বললেই চলে।

 

চাষিরা জানান, বন্যা, পোকামাকড় ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রতিবছর আমনক্ষেত নষ্ট হয়ে উৎপাদন কমত। কোনো কোনো বছর ফসল তো দূরের কথা আমনক্ষেতের খড়ও আনতে পারতেন না। উঠত না আবাদের খরচ। এই সময়ে হাতে টাকা না থাকায় মরার আকাল (মঙ্গা) পড়ত। আশ্বিন- কার্তিকে অভাব দেখা দিত। অর্থ সংকটে দিন কাটাতেন কৃষি শ্রমিকেরা। সেই অভাব দূর করে দিয়েছে আগাম জাতের হাইব্রিড জাতের ধান।

 

জানা যায়, এক সময় চাষ করা হতো দেশি জাতের বিচিত্র নামের ধান। এর মধ্যে বেতই, ধলাগুছি, ভূজনকরপু, হিদি, কাজলগিরি, লালপাগড়ি, লাল স্বর্ণা, নাইজারশাল, মাইটি ভাঙন, কাইকি, দাদখানি, ভাদই, নীলকমল, মইন্দাগিরি, কাকুয়া, আকাশমণি, বিন্নি, ডুমরা, ফুল বালাম, লোহাজাং, লালচল্লিশ, ঘৃতশাল, পঙ্খিরাজ, পদ্মরাগ, হীরাশাল, জটাশালী, চিনিসাগর, চন্দন, মানিকশোভা, মুক্তাঝুরি সহ আরও অনেক জাতের ধান।

 

চাষিদের ভাষ্যমতে, পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচ থেকেও এসব ধানের মাথা দেখা যেত। পানিতে ডুবেনা না, বরং পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। একটা চাষ দিয়ে এই ধানের বীজ ছিটিয়ে দিলেই হত। জমি নরম থাকলে চাষেরও দরকার হয় না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত। বৈশাখ মাসের দিকে শুধু ছিটিয়ে দিয়েই ধান চাষ করা যেত। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিতে হতো না।

 

সীমিত আকারে উপজেলার কয়েকজন চাষি অমরপুর গ্রামের চুইনির বিলে ও ধনদহ বিলে বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের ধান আবাদ করেছেন। দুই বিলে ১৫ জন কৃষক অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে লালপাগড়ি, ধলাগুছি, হিদি,মাইটি ভাঙন ধানের চাষ করেছেন। চাষিদের স্বপ্নজাগানিয়া এই ধান হারিয়ে যেতে বসেছিল।

 

শুক্রবার(০১-১২-২০২৩) ওই বিলে গিয়ে দেখা গেল, মাজা কোমর পানির ওপর দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের শিষ। স্বপ্নও দেখাচ্ছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া দেশি জাতের ধান। কার্তিক মাস অবধি যে জমিতে কোনো ধান হতো না, সেই জমিতে এখন ফলছে সোনার ফসল।

 

চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এখন ধান কেটে ঘরে তুলছেন। বিঘা প্রতি ফলন পাচ্ছেন ১৫-২০ মন। এই ধানের চাল লাল হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে বাজারে এর দামও বেশি, পুষ্টিগুণও বেশি বলে জানান।

 

অমরপুর চুইনির বিলে ৩বিঘা জমিতে দেশি জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন চেতন আলী। মোহাম্মদ আলী জানান,ধনদহ বিলে সাড়ে ৩বিঘা জমিতে লালপাগড়ি ধানের আবাদ করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলবেন। তাদের মতো সীমিত আকারে আরো কয়েকজন চাষি দেশি জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন। কম খরচে চাষযোগ্য এসব ধানের জাত সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

 

হাবাসপুর গ্রামের আবুল কালামসহ একাধিক চাষি বলেন, হাইব্রিড জাতের লালস্বর্ণা ব্রিধান-৮৭ আবাদে খরচ হইছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ২৮ কেজি। ১বিঘা ধানের কাঁচা খড় বিক্রি করতে পারবেন ৫ হাজার টাকার। অভাবও দূর হচ্ছে। এক ফসল বিক্রি করে আরেক ফসলের খরচ জোগাতে পারছেন।

 

পারশাওতা গ্রামের সেন্টু মিঞা বলেন, ধান চাষ, কাটা ও মাড়াইয়ের পরে বর্তমানে জমিতে আলু ও শস্যে চাষ করছেন। এখন ধানি জমিতে বছরে তিনবার ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। এর আগে বছরে দুইবার ধানচাষ হতো। আমন ধান কাটার উপযোগী হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ মাস। ভরা মৌসুমে বাজারে দামও কম পেতেন। এতে লোকসান হতো।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের অফিসার কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান জানান, আমনের জাতগুলোর তুলনায় হাইব্রিড আগাম জাতের ধান আগে পেকে যায়, সময় কম লাগে। এর ফলে কৃষক অন্য ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। দেশী জাতের ধানচাষের চাইতে হাইব্রিড ধানচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার তার উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। চাষ হয়েছে ২ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে।

 

 

রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের, অতিরিক্ত উপ পরিচালক(শস্য) মোছাঃ সাবিনা বেগম বলেন, হারানো ধান চাষের উদ্যোগটা ভালো। তবে টেকসই কৃষি উন্নয়নে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আগাম জাতের ধান কৃষকের অভাব হটিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের ধান সংরক্ষণ ও আবাদের বিষয়টি স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

তানোর বিএনপির নেতৃত্বে হযরতকে দেখতে চাই তৃণমুল

error: Content is protected !!

আগাম জাতের ধান চাষে চাষি-শ্রমিক কারোই হাতটান পড়ছে না

মাজাকোমর পানির ওপর দুলছে হারানো ধানের সোনালী শিষ

আপডেট টাইম : ০৬:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৩
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক : :

হাইব্রিড ধান চাষ করে চোখেমুখে এখন আনন্দের ঝিলিক চাষিদের। চাষি-শ্রমিক কারোই হাতটান পড়ছে না। অন্যদিকে আধুনিক কৃষিব্যবস্থার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিচিত্র আর বাহারি নামের দেশি জাতের রকমরি ধান। অগ্রহায়ণের শস্যপ্রাপ্তিতে এক সময় আনন্দ দিত দাদখানি চাল কিংবা উড়কি ধানের মুড়কি হিসেবে প্রচলিত এসব ধান। এখন আর নেই বললেই চলে।

 

চাষিরা জানান, বন্যা, পোকামাকড় ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রতিবছর আমনক্ষেত নষ্ট হয়ে উৎপাদন কমত। কোনো কোনো বছর ফসল তো দূরের কথা আমনক্ষেতের খড়ও আনতে পারতেন না। উঠত না আবাদের খরচ। এই সময়ে হাতে টাকা না থাকায় মরার আকাল (মঙ্গা) পড়ত। আশ্বিন- কার্তিকে অভাব দেখা দিত। অর্থ সংকটে দিন কাটাতেন কৃষি শ্রমিকেরা। সেই অভাব দূর করে দিয়েছে আগাম জাতের হাইব্রিড জাতের ধান।

 

জানা যায়, এক সময় চাষ করা হতো দেশি জাতের বিচিত্র নামের ধান। এর মধ্যে বেতই, ধলাগুছি, ভূজনকরপু, হিদি, কাজলগিরি, লালপাগড়ি, লাল স্বর্ণা, নাইজারশাল, মাইটি ভাঙন, কাইকি, দাদখানি, ভাদই, নীলকমল, মইন্দাগিরি, কাকুয়া, আকাশমণি, বিন্নি, ডুমরা, ফুল বালাম, লোহাজাং, লালচল্লিশ, ঘৃতশাল, পঙ্খিরাজ, পদ্মরাগ, হীরাশাল, জটাশালী, চিনিসাগর, চন্দন, মানিকশোভা, মুক্তাঝুরি সহ আরও অনেক জাতের ধান।

 

চাষিদের ভাষ্যমতে, পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচ থেকেও এসব ধানের মাথা দেখা যেত। পানিতে ডুবেনা না, বরং পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে। একটা চাষ দিয়ে এই ধানের বীজ ছিটিয়ে দিলেই হত। জমি নরম থাকলে চাষেরও দরকার হয় না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত। বৈশাখ মাসের দিকে শুধু ছিটিয়ে দিয়েই ধান চাষ করা যেত। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিতে হতো না।

 

সীমিত আকারে উপজেলার কয়েকজন চাষি অমরপুর গ্রামের চুইনির বিলে ও ধনদহ বিলে বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের ধান আবাদ করেছেন। দুই বিলে ১৫ জন কৃষক অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে লালপাগড়ি, ধলাগুছি, হিদি,মাইটি ভাঙন ধানের চাষ করেছেন। চাষিদের স্বপ্নজাগানিয়া এই ধান হারিয়ে যেতে বসেছিল।

 

শুক্রবার(০১-১২-২০২৩) ওই বিলে গিয়ে দেখা গেল, মাজা কোমর পানির ওপর দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের শিষ। স্বপ্নও দেখাচ্ছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া দেশি জাতের ধান। কার্তিক মাস অবধি যে জমিতে কোনো ধান হতো না, সেই জমিতে এখন ফলছে সোনার ফসল।

 

চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এখন ধান কেটে ঘরে তুলছেন। বিঘা প্রতি ফলন পাচ্ছেন ১৫-২০ মন। এই ধানের চাল লাল হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে বাজারে এর দামও বেশি, পুষ্টিগুণও বেশি বলে জানান।

 

অমরপুর চুইনির বিলে ৩বিঘা জমিতে দেশি জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন চেতন আলী। মোহাম্মদ আলী জানান,ধনদহ বিলে সাড়ে ৩বিঘা জমিতে লালপাগড়ি ধানের আবাদ করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলবেন। তাদের মতো সীমিত আকারে আরো কয়েকজন চাষি দেশি জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন। কম খরচে চাষযোগ্য এসব ধানের জাত সংরক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

 

হাবাসপুর গ্রামের আবুল কালামসহ একাধিক চাষি বলেন, হাইব্রিড জাতের লালস্বর্ণা ব্রিধান-৮৭ আবাদে খরচ হইছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ২৮ কেজি। ১বিঘা ধানের কাঁচা খড় বিক্রি করতে পারবেন ৫ হাজার টাকার। অভাবও দূর হচ্ছে। এক ফসল বিক্রি করে আরেক ফসলের খরচ জোগাতে পারছেন।

 

পারশাওতা গ্রামের সেন্টু মিঞা বলেন, ধান চাষ, কাটা ও মাড়াইয়ের পরে বর্তমানে জমিতে আলু ও শস্যে চাষ করছেন। এখন ধানি জমিতে বছরে তিনবার ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। এর আগে বছরে দুইবার ধানচাষ হতো। আমন ধান কাটার উপযোগী হতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ মাস। ভরা মৌসুমে বাজারে দামও কম পেতেন। এতে লোকসান হতো।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের অফিসার কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান জানান, আমনের জাতগুলোর তুলনায় হাইব্রিড আগাম জাতের ধান আগে পেকে যায়, সময় কম লাগে। এর ফলে কৃষক অন্য ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। দেশী জাতের ধানচাষের চাইতে হাইব্রিড ধানচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এবার তার উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। চাষ হয়েছে ২ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে।

 

 

রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের, অতিরিক্ত উপ পরিচালক(শস্য) মোছাঃ সাবিনা বেগম বলেন, হারানো ধান চাষের উদ্যোগটা ভালো। তবে টেকসই কৃষি উন্নয়নে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আগাম জাতের ধান কৃষকের অভাব হটিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের ধান সংরক্ষণ ও আবাদের বিষয়টি স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন।

 


প্রিন্ট