ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নে পদ্মা নদীর অপর পারের দুর্গম চরাঞ্চলে রমেশ বালার ডাঙ্গী গ্রামের নিজ কুটিরে অসুস্থ্য বীরঙ্গনা চারুবালা (৬৭)কে দেখতে গিয়ে গত সোমবার বিকেলে ফলঝুঁড়ি শুভেচ্ছা উপহার দিলেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া হোসেন।
এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চরভদ্রাসন থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফিরোজ আলী মোল্যা ও এসআই আওলাদ হোসেন।
ফলঝুঁড়ি হাতে পেয়ে বীরঙ্গনা চারুবালা ভেজা চোখে অনুভুৃতি ব্যক্ত করে বলেন “ ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে পকিস্থানী হায়েনারা আমার পরিবারে এসে স্বামী চন্দ্র চরণ বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে এবং আমার কোলে থাকা শিশু কন্য পার্বতী (২)কে আছড়িয়ে মেরে ফেলার পর আমার উপর নির্যাতন ও ধর্ষন করে।
আামর পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া সেই বিভিষিকাময় দিনগুলি মনে রেখে পায়ে হেটে ও ঘোড়ার গাড়ীতে বহু কষ্ট করে পুলিশ অফিসাররা আমাকে দেখতে এসেছেন। জাতি আমাকে ভুলে যায় নাই, এর চেয়ে বড় কিছু আমার আর চাওয়ার নাই”।
ওই বীরঙ্গনার কুটিরে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধে সবকিছু হারিয়ে উক্ত গ্রামের পদ্মা নদী থেকে প্রায় ৫কি.মি. দুরত্বে দুর্গম বালুচর ও ফসলী মাঠের মাঠী জমির মধ্যে আপন ভাই সিদ্ধিচরণ সরকারের বসতী। তিনি ভাইয়ের আশ্রয়ে বসতভিটের উত্তর পাশে ছোনবন ও পাটখড়ি দিয়ে গড়া জরাজীর্ণ পুরাতন একটি ভাঙাচুরা কুটিরে বসবাস করে আসছেন। বীরঙ্গনা চারুবালার বসতি দেখে মনে হয়, কুটিরতো নয়, যেন হাঁস-মুরগী পালনের খোয়াড়।
ওই বীরঙ্গনা জানান, স্বাধীনতা পরবর্তি এ যাবতকাল কেউ তার খবর নেয় নাই। ক’মাস আগে ফরিদপুর জেলা শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটি নামক একটি সংগঠন হয়েছে। উক্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত ও শহীদ পরিবার হিসেবে খুজে বের করে সম্প্রতী তাকে নগদ ৫ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে তাদের পরিচয় তুলে ধরছেন।
উক্ত অসহায় বীরঙ্গনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে আরও বলেন, “ এখনো স্থানীয় প্রভাবশালী ও বখাটেরা তার বসতি ভাঙা কুটিরের জমিজমা নিয়ে ঝামেলা করে চলেছে এবং হুমকী ধুমকী দিচ্ছে। এ সময় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিবেশীদের ডেকে এনে শাষিয়ে দেন এবং যেকোনো সমস্যার ব্যাপারে সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানান”।
এ ব্যপারে ফরিদপুর জেলা শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির সভাপতি শেখ সাজ্জাদুল হক সাজ্জাত বলেন, “ স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানী হায়েনারা চারুবালার স্বামী সন্তান মেরে ফেলে, তাকে ধর্ষন করে এবং বাড়ীঘর আগুন পুড়িয়ে দেয়ার পর ওই দুর্গম চরাঞ্চলে বীরঙ্গনা চারুবালা চীর অসহায়র হয়ে ৫০টি বছর কাটিয়ে দিয়েছে।
ফরিদপুর জেলা শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটি তাকে খুজে বের করে সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, সম্প্রতী স্থানীয় একটি মহল অসুস্থ্য বীরঙ্গনাকে হুমকী দিচ্ছল। বিষয়টি ফরিদপুর পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবগত করলে তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে উক্ত বীরঙ্গনার দেখাশুনা করে চলেছেন”।
প্রিন্ট