দেশবরেণ্য বাউল বাউল শিল্পী, লালন সাধক ওস্তাদ শফি মন্ডলের বাড়ির আঙিনায় বসেছিল সাধুর হাট। এই হাটে বাউল সম্রাট লালনের তত্ত্ব, দর্শন, সঙ্গীত সব নিয়েই গান, আলোচনা চলে অবিরাম।
‘মানুষ তত্ত্ব যার সত্য হয় মনে, সেকি অন্য তত্ত্ব মানে“ প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশের প্রখ্যাত এই বাউল শিল্পী ফকির শফি মন্ডলের প্রথম খেলাফত দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুর থেকে তাঁর আখড়া বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হোসেনাবাদে চলে সাধু সঙ্গ। এতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে আখড়া বাড়ি এলাকায়।
দেশের খ্যাতনামা সব বাউল শিল্পীদের গানে মেতে উঠছিল এখানকার উপস্থিত দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার লালন অনুসারী ও ভক্তরা। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হরেক রকমের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছিল এখানকার দোকানীরা ।
নন্দিত এই বাউল শিল্পী শফি মন্ডল এর প্রথম খেলাফত দিবসে উপলক্ষে শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুর থেকে ররিবার (১২ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত আখড়া বাড়িতে একদিন ব্যাপী সাধু সঙ্গের আয়োজন করেছিলেন তার পরিবার ও ভক্ত বৃন্দরা।
এবিষটি নিশ্চিত করেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় জামাতা মুকুলুর রহমান। তিনি জানান, খেলাফত দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুর থেকে বোরবার বিকেল পর্যন্ত আখড়া বাড়িতে দিনব্যাপি সাধু সঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল।
এদিকে এই সাধুসঙ্গে রাতে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন, উপজেলা আওয়ামলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
কথা হয় ঢাকা থেকে আগত আশিক নামের এক ভক্তের সাথে। তিনি জানান, আজ সকালেই এখানে এসেছি গুরু শফি মন্ডলের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। আমাদের সাথে আরো অনেকেই এসেছেন।
ঝিনাইদহ থেকে আসাা রানা আহমেদ জানান, তারা ফেইসবুকের মাধ্যমে এই সাধুসঙ্গের খবর পেয়েছেন। এখানে তারা সঙ্গীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি গান উপভোগ করার জন্য এসেছিলেন। ভেড়ামারা থেকে আসা সৌকত হোসেন জনান, তারা এখানে লালন সঙ্গীত উপভোগ করতে এসেছেন।
এদিকে সাধুসঙ্গকে কেন্দ্র করে হোসেনাবাদ থেকে ফিলিপনগর সড়কের দুই পাশে বসেছে হরেক রকমের দোকান। এখান কার এক দোকানী স্বপন হোসেন জানান, তিনি কালকে থেকে এখানে দোকান দিয়ে বসেছেন। প্রচুর মানুষের সমাগমে তার বেচা বিক্রিও ভালোই হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গেল বছরের শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ‘এসো হে প্রভু নিরঞ্জন’ এই বাণীকে প্রতিপাদ্য করে প্রয়াত গুরু সুলতান ফকিরের আদেশে খেলাফত গ্রহনকরেন দেশ বরেণ্য বাউল শিল্পী শফি মন্ডল।
ওই দিন বেলা ১১টায় নিজেদের দীনহীন করে শুধুমাত্র সাদা কাফনের কয়েক টুকরো কাপড় পরিধান করে শফি মন্ডল ও তার স্ত্রী জরিনা খাতুন নিজ আখড়াবাড়িতে অনুষ্ঠানিকভাবে খিলকা পরিধান করে গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে খেলাফত গ্রহণ করেন । ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে জীবিত থেকেই গ্রহণ করেন সস্ত্রীক মরণের স্বাদ।
সাধুদের সঙ্গে, ওস্তাদ শফি মন্ডল, শারমিন সুলতানা সুমি, লায়লা সহ লালন সঙ্গীত শিল্পীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শেষে পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে ববিবার বিকালে আগত অতিাথদের বিদায়ী প্রণাম জানান দেশ বরেণ্য বাউল শিল্পী ফকির শফি মন্ডল।