প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নারীরা সব সময়ই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রথম সারিতে থেকেছেন। তাঁরা নিজেরাই যেন কাজের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, আমি তাঁদের প্রতি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’সৌদি আরবের জেদ্দায় গতকাল সোমবার ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারি বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারি বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি অনন্য উদাহরণ আছে, যেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি দলের উপনেতা সবাই নারী।
এ ছাড়া আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বস্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।তিনি বলেন, ‘যতবার আমি দায়িত্বে এসেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উন্নীত করার জন্য সব বাধা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংস্থায় আমাদের নারীদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে দেখে আমি গর্ব বোধ করি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমাদের মেয়েরা পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হোস্ট হিসেবে আমি ওআইসির সদস্য দেশগুলোর তরুণ মহিলাদের এই চমৎকার প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের প্রমাণ।’
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী কর্মী।
নারী উদ্যোক্তারা আমাদের কুটির, ক্ষুদ্র শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। আইটি ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স এবং স্টার্টআপে নারীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আছে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার অর্থ, বাজার, ধারণা ও প্রশিক্ষণে নারীদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ সরকারি ক্ষেত্রে ছয় মাসের বেতনের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছি, যাতে বিদেশে কর্মরত নারী কর্মীদের সুরক্ষা ও মঙ্গল নিশ্চিত করা যায়। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, বিধবা, পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক নারীরা উপকৃত হচ্ছেন। সরকার বিনা মূল্যের আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে যৌথ মালিকানা দিচ্ছে, যাতে বিচ্ছেদ হলে সেটি স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও সাইবার হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন বাড়ছে।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আইন অনুসারে সব জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। আমরা নারী শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরা গর্বের সঙ্গে আফ্রিকায় জাতিসংঘের মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।’
পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে গতকাল মক্কায় পবিত্র মসজিদুল হারামে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোনাজাত করেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সফরসঙ্গীরা।
প্রিন্ট