ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ঠাকুরগাঁওয়ে তিন নারী ও এক পুরুষকে আটক Logo ফরিদপুরে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo পটিয়ায় গরু চুরি বৃদ্ধিতে আতঙ্ক, টহল পুলিশের কার্যক্রম জোরদারের দাবি Logo দৌলতপুরে চাচাতো ভাইয়ের লাঠির আঘাতে মাছ ব্যবসায়ী নিহত Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় কবরী

বনানী কবরস্থানে কবরীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়ার একটি মুহূর্ত।

ছবির কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে সরকারি অনুদানের একটি ছবি নির্মাণ শেষ করেছেন কিছুদিন আগে। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। এসব বিষয় নিয়েই মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলোতে ব্যাস্ত সময় পার করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত সারাহ বেগম কবরী।

গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন, চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর প্রস্থান অগণিত মানুষকে অশ্রুসিক্ত করেছে। আজ শনিবার দুপুরে বনানী কবরস্থানের সবুজ মাটিতে সমাহিত করা হলো তাঁকে।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী

বাদ জোহর কবরস্থান এলাকায় তাঁর জানাজা হয়। জানাজা শুরুর আগে বনানী কবরস্থানের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনয়শিল্পী ও সাবেক সাংসদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

বনানী কবরস্থানে শেষবারের মতো এ শিল্পীকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, নিশাত সালওয়াসহ আরও অনেকে।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হকের পক্ষে এ শিল্পীকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

করোনায় আক্রান্ত দেশ বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী গতকাল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রাতে তাঁকে হাসপাতালের শব হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে কবরীর মরদেহ নেওয়া হয় মোহাম্মদপুরের আল মারকাজুলে। সেখানে গোসল করানো শেষে তাঁর মরদেহ গুলশান ২ নম্বর এলাকার লেক রোডের বাড়িতে শেষবারের মতো নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ রাখার পরে কবরীকে জোহরের আগেই নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থান এলাকায়। এরপর সেখানেই গার্ড অব অনার এবং জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
খুসখুস কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

৭ এপ্রিল রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

কবরী

সারাহ বেগম কবরী।

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলোয় অভিনয় করেন।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যে কবরী ও আনোয়ার হোসেন

-চলচ্চিত্রের দৃশ্যে কবরী ও আনোয়ার হোসেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী। তখনকার স্মৃতি স্মরণ করে একবার কবরী বলেছিলেন, ‘সেখানকার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলাম। কীভাবে আমি মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে সেখানে পৌঁছেছি, সে কথা বলেছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশকে সাহায্যের আবেদন করি।’

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’  বেশ জনপ্রিয়তা পায় ।

বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছাড়িয়ে যায় আগের সব জনপ্রিয়তাকে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা সামনের দিকে। জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিল রাজ্জাক-কবরী।
তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলছিলেন, ‘আমরা এতটাই আবেগ দিয়ে অভিনয় করতাম যে ছবির প্রতিটি দৃশ্যকেই জীবন্ত করে তুলতাম।’ অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। এমনকি ওই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তাঁর আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সবশেষে সিনেমায়। কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের জননী।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে তিন নারী ও এক পুরুষকে আটক

error: Content is protected !!

বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় কবরী

আপডেট টাইম : ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১
ডেস্ক রিপোর্টঃ :

ছবির কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে সরকারি অনুদানের একটি ছবি নির্মাণ শেষ করেছেন কিছুদিন আগে। এরই মধ্যে নতুন আরেকটি ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। এসব বিষয় নিয়েই মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলোতে ব্যাস্ত সময় পার করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত সারাহ বেগম কবরী।

গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন, চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর প্রস্থান অগণিত মানুষকে অশ্রুসিক্ত করেছে। আজ শনিবার দুপুরে বনানী কবরস্থানের সবুজ মাটিতে সমাহিত করা হলো তাঁকে।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী

বাদ জোহর কবরস্থান এলাকায় তাঁর জানাজা হয়। জানাজা শুরুর আগে বনানী কবরস্থানের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনয়শিল্পী ও সাবেক সাংসদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

বনানী কবরস্থানে শেষবারের মতো এ শিল্পীকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেত্রী সোহানা সাবা, নিশাত সালওয়াসহ আরও অনেকে।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল হকের পক্ষে এ শিল্পীকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ আরও বেশ কিছু সংগঠন।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

করোনায় আক্রান্ত দেশ বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী গতকাল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রাতে তাঁকে হাসপাতালের শব হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে কবরীর মরদেহ নেওয়া হয় মোহাম্মদপুরের আল মারকাজুলে। সেখানে গোসল করানো শেষে তাঁর মরদেহ গুলশান ২ নম্বর এলাকার লেক রোডের বাড়িতে শেষবারের মতো নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ রাখার পরে কবরীকে জোহরের আগেই নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থান এলাকায়। এরপর সেখানেই গার্ড অব অনার এবং জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
খুসখুস কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

৭ এপ্রিল রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

কবরী

সারাহ বেগম কবরী।

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলোয় অভিনয় করেন।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যে কবরী ও আনোয়ার হোসেন

-চলচ্চিত্রের দৃশ্যে কবরী ও আনোয়ার হোসেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী। তখনকার স্মৃতি স্মরণ করে একবার কবরী বলেছিলেন, ‘সেখানকার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলাম। কীভাবে আমি মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে সেখানে পৌঁছেছি, সে কথা বলেছিলাম। সেখানে গিয়ে তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দেশকে সাহায্যের আবেদন করি।’

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’  বেশ জনপ্রিয়তা পায় ।

বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ ছাড়িয়ে যায় আগের সব জনপ্রিয়তাকে। এরপর কেবলই এগিয়ে চলা সামনের দিকে। জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিল রাজ্জাক-কবরী।
তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কবরী বলছিলেন, ‘আমরা এতটাই আবেগ দিয়ে অভিনয় করতাম যে ছবির প্রতিটি দৃশ্যকেই জীবন্ত করে তুলতাম।’ অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

২০০৫ সালে ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। এমনকি ওই ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

কবরী

-সারাহ বেগম কবরী।

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তাঁর আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সবশেষে সিনেমায়। কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তাঁদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী পাঁচ সন্তানের জননী।


প্রিন্ট