দিনপঞ্জিতে হেমন্তের হাতছানি, প্রকৃতিতে বইছে হিমেল হাওয়া, হালকা কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। আর নানা প্রজাতির পাখির কলতানে মুখরিত চারদিক। প্রতিদিন সকাল বিকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মা পাড় পাখিদের কলতান, কলরবে মুখরিত হয়ে উঠছে। পাখিদের এ উৎসব দেখতে মেতে উঠেছে এখানকার মানুষ। মানুষকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করছে পদ্মার চর ঘিরে অতিথি বা পরিযায়ী পাখির কলরব। নদীর এপাড় হতে ওপাড়ে উড়ে চলা পাখির কিচির-মিচির কলতানে মেতে উঠেছে প্রকৃতি।
প্রতিদিন পাখিগুলোর পদ্মার চরে খাবারের সন্ধান, খুনসুটি, আলস্য আর ওড়া-উড়ির এক নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। পাখিদের দৃষ্টিনন্দন ছবি তুলতে চিত্রগ্রাহকেরাও আসছেন নানা স্থান থেকে। এতে বাড়তি রোজগার বেড়েছে নদীপাড়ের মাঝিদের।
এদিকে এসব পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন। বন বিভাগ বলছে, পরিবেশগত কারণ ও খাবারের সন্ধানে শীতের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত এ অঞ্চলে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ বাড়ে। শীতের শুরুতে নদীর শান্ত বুকে জেগে ওঠা চরে ঝাঁক বেঁধে আকাশে ডানা মেলছে এসব রং-বেরঙের পরিযায়ী পাখি।
উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরে কালোমাথা কাস্তেচরা, শামুক খোল, আবাবিল, লিটিল টার্ন, কালা পাখি ঠেঙ্গিসহ বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির পাখির দেখা মিলছে । পাখিদের এ কলতান উপভোগ করতে প্রতিদিন পদ্মাপাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
পদ্মাপাড়ে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী রাকিবুল ইসলাম নামের এই যুবক জানান, ‘শীতের শুরুতেই আমাদের এই পদ্মার চরে অতিথি পাখিগুলো আসে। এগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। নদীর পাড়ে বেড়াতে এসে পাখিগুলো দেখে নৌকায় চড়ে পদ্মার চরে গিয়েছিলাম তাঁদের সঙ্গে মিশে যেতে।’
দর্শনার্থী নাইমুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার চরে আসা অতিথি পাখিগুলো দেখে বেশ ভালো লাগছে। এ এক অন্য রকম দৃশ্য।’
ঘুরতে আশা দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদন দিতে নদী পারাপারে বেড়েছে মাঝিদের ব্যস্ততা। মাঝি ও নৌকা মালিকেরা বলেছেন, নদীপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করা হলে আরো বেশি দর্শনার্থী আসত।
নৌকার মাঝি সাগর আলী জানান, প্রতিদিন বিকেল হলেই নদীর পাড়ে বেড়াতে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাঁরা নৌকায় চড়ে পদ্মার চর সহ নদীতে ঘুরে বেড়ান। ফলে মাঝিদের রোজগার ভালো হচ্ছে।
স্থানীয় চিত্রগ্রাহক তন্ময় তাহসান সবুজ জানান, তাঁরা প্রায় পদ্মার চরে দলবেধে শখের বসে অতিথি পাখিদের ছবি তোলেন । ছবিগুলো শখের বসে উঠালেও পাখিদের খুনসুটি বেশ উপভোগ করেন তাঁরা।
তবে, অভিযোগ আছে চরে পাখিদের আগমনের সঙ্গে বাড়ে পাখি শিকারীদের আনাগোনা। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি ও পাখি গবেষক এস আই সোহেল জানান, অতিথি পাখি শিকার বন্ধ না হলে জীববৈচিত্রের মান নষ্টের পাশাপাশি কমে আসবে অতিথি পাখির সংখ্যা। এসব পাখি আমাদের সম্পদ। এগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। স্থানীয়দের সচেতনতার পাশাপাশি দরকার প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা।’
এদিকে বন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশগত উন্নতি ও খাবার নিশ্চিত হওয়ায় এ সময়ে পদ্মার চরে অতিথি পাখিদের বিচরণ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে এসব পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা আবু বকর জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরণের গাছপালা বাড়ায় পাখির খাবার এবং বসবাসের জায়গা বেড়েছে যা পাখিদের বাস যোগ্য হওয়ায় তারা পদ্মার চরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
এ ছাড়া, বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য তৈরির জন্য ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদি মৌজা এলাকায় জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া আছে অনুমতি পেলে আমরা নতুন করে কার্যক্রম শুরু করব।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর উপজেলার পদ্মার চরে মদনটাক, বালিহাসসহ হিমালয়ের শকুনের দেখা মিলেছে। এ ছাড়া চরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে শত শত পরিযায়ী পাখি।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, এসব পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সঙ্গে পাখি শিকার হলে প্রশাসনকে জানাতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি পাখিও যেন শিকার করা না হয় সে বিষয়ে আমরা তৎপর আছি।
প্রিন্ট