সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল থেকে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও ওয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড হয় এবং মুহূর্তেই ভাইরাল। বিষয়টি বরগুনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৭ অক্টোবর কিছু কিছু ভিডিও সরিয়ে ফেলতেও দেখা গেছে।
ভিডিও দুটিতে এক নারীর সাথে বরগুনার সাবেক জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে দেখা গেছে। ভিডিওতে তাদের একটি বন্ধ ঘরে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় দেখা গেছে। জেলা প্রশাসকের পরিচয় নিশ্চিত হলেও নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের দায়িত্বপালনকালীন এই নারীকে বিভিন্ন সময় বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসকের আত্মীয়ের পরিচয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সার্কিট হাউজ মিলনায়তনের ইন্টোরিয়ার ডিজাইন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঞ্চসজ্জার কাজ বাগিয়ে নিতেন ওই নারী।
বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরগুনায় জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন মো. হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান বরগুনার জেলা প্রশাসক পদে আড়াই বছর কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৯ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে বরগুনার জেলা প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে উপসচিব পদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখায় পদায়ন করা হয়। এ বছরের ৩০ জুলাই তিনি নতুন জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলামের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করে ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন। ৪ সেপ্টেম্বর উপসচিব পদ থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিও পেয়েছেন বরগুনার সাবেক ডিসি হাবিবুর রহমান।
বদলির পরপরই জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বরগুনার মাছ বাজারে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে ব্যবসায়ীরা সাড়ে আট কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন। সাবেক এই ডিসির ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি ব্যপক আলোচনার জন্ম দেয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অসুস্থতার অজুহাতে হেলিকপ্টার ভাড়া করে ঘুষের টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান ডিসি হাবিবুর রহমান।
বরগুনা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, সোমবার বিকেলে ভিডিওটি প্রথমে বরগুনার ফেসবুক ব্যবহারকারী বিভিন্ন ব্যক্তির ম্যাসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেটি বেশকিছু পেজেও আপলোড করা হয়। ভিডিওটি আমি দেখেছি। এতে সাবেক জেলা প্রশাসক ও এক নারী একটি কক্ষে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অবস্থান এবং উভয়ের কিছু কথোপকথন রয়েছে। ভিডিও ক্লিপস দুটি এখন বরগুনার সামাজিক মাধ্যমে অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্ত। সরকারের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার এমন ভিডিও অশোভন ও আপত্তিকর।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, জেলার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে সেগুলো আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য নেতিবাচক। তিনি এখন বরগুনায় নেই তারপরও যে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সেটা একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে ঠিক করেননি উনি।
ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন বরগুনার কোনো কর্মকর্তা। যোগাযোগ করা হলে বরগুনা জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
ভিডিওর ব্যাপারে কথা বলতে বরগুনার সাবেক জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
-দেশ রূপান্তর
প্রিন্ট