ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৩০ সেকেন্ডের টর্নেডোর তান্ডবে ছয়টি গ্রামের শত শত বসতঘর, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যাইনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুষলধারে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও বিকেলে উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, মালা, তিতুরকান্দি, বড়ভাগ ও সদর ইউনিয়নের ব্রা²ণ জাটিগ্রাম, বিদ্যাধরগ্রামে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের টর্নেডোর তান্ডবে কয়েক শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে।
২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভাব হয়নি। এসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণ গাছপালা ঝড়ে ভেঙে পড়ে থাকলেও শ্রমিকের অভাবে গাছ অপসারণ করা সম্ভাব হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তবে ঝড়ে কোনো হতাততের ঘটনা ঘটেনি।
উপজেলা প্রশাসনের নিদের্শে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে। বৃহস্পতিবার রাতেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের কৃষক চঞ্চল মিয়া জানান,তার তিনটি ঘর চোখের পলকে উধাহ হয়ে গেছে। টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে কোথায় পড়েছে খুঁজে পাচ্ছি না। এখন খোলা আকাশের নিচে আছি। পরিবার নিয়ে কিভাবে আছি তা বুঝাতে পারবো না।
টগরবন্দ ইউনিয়নের বগভাগ গ্রামের জগদীশ পাল বলেন, সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের তিনটি ঘর ও একটি মন্দিরসহ লক্ষ টাকার বিভিন্ন গাছ ভেঙে গেছে। এখন ভাঙা গাছ সরানোর লোক পাচ্ছি না।
একই ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ সিকদার জানান, আমার মোট চারটি ঘর ছিল। ঝড়ে আমার সবগুলো ঘর ভেঙে গেছে। এখন আমার কাছে কোনো টাকা নেই যে ঘর মেরামত করবো। চোখের পলকে সবকিছু তছনছ হয়ে গেলো।
সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খবিবর রহমান বলেন, আমার জীবনে আলফাডাঙ্গার বুকে এতবড় ঝড় দেখিনি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গেলো।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বুলবুল ও টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য একটি তালিকা তৈরি করার কাজ চলমান রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হক জানান, খবর পেয়ে রাতেই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বত্মক সহযোগীতা করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান বলেন, চোখের পলকে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার ছয়টি গ্রামের কয়েক শতাধিক কাঁচাপাকা ও বাড়ি ঘর ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। খবর পেয়ে উদ্ধারকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। বৃষ্টির মধ্যেই উদ্ধার কাজ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করার কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।
প্রিন্ট