কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রোপা আমন ধান রক্ষা করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষকরা আলোক ফাঁদের মত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। সোমবার (২ অক্টোবর) রাতে উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী এলাকার কৃষকরা আলোক ফাঁদ তৈরী করছে।
এসময় আলোক ফাঁদ দেখার জন্য ও কৃষকদের উৎসাহ প্রদানে উপস্থিত হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার, উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সেরাজুল ইসলাম, পার্বতীপুর ইউনিয়ানের ৮নং ওয়াড ইউপি সদস্য মোঃ একরামুল হক, পার্বতীপুর ইউনিয়ান ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইব্রাহিম, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রায়হান মাহবুবসহ স্থানীয় কৃষকবৃন্দ।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, আলোক ফাঁদ ধানের পোকা দমনের একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে সন্ধ্যার পর ধানখেত হতে ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হয়। এর নীচে একটি বড় আকারের একটি প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার বা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখা হয়।
সন্ধ্যার পর মাঠ জুড়ে যখন অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন আলোক ফাঁদের আলোর ঝলকে আকৃষ্ট হয়ে ধানখেতের বিভিন্ন পোকামাকড় এ পাত্রে চলে আসে। কৃষি বিভাগ আরো জানায়, আমন ধান রোপনের পর থেকেই সন্ধ্যার পরে ধানখেতের পাশে বিদ্যুতের আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এবং স্ব স্ব ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। যোগীবাড়ী গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল লতিফ টুটুলসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ধানখেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করাসহ এর প্রতিকার করা সহজ হচ্ছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সেরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ব্লকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কৃষকদের নিয়ে সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। এ আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ধানের জমিতে বর্তামনে কী কী ক্ষতিকর ও উপকারী পোকামাকড় রয়েছে তা শনাক্ত করে ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করতে আলোক ফাঁদের বিকল্প নেই।
- আরও পড়ুনঃ তালা খোলে ছাত্ররা, শিক্ষক আসেন ১০টার পর
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, আলোক ফাঁদ হলো মনিটরিং টুলুস, যেখানে কৃষকের ধানখেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয় এবং সেই অনুযায়ী পোকামাকড় দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। এতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে এবং ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয়। সাধারণত ধানের সর্বোচ্চ কুশি স্তরে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়। যাতে ক্ষেত থেকে পোকামাকড় লোকালয়ে চলে না আসে তাই সন্ধ্যায় বাসাবাড়িতে আলো জ্বলার আগেই ধানের ক্ষেতের ৫০ মিটারের মধ্যে আলোক ফাঁদের আলো জ্বালানো হয়। আলোতে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় আসলে তা দেখে পরর্বতী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্রতি সোমবার উপজেলার ২৫টি ব্লকে একযোগে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়।
প্রিন্ট