গত একমাস সময় ধরে ঢাকা-হাতিয়া রুটের লঞ্চে পা ফেলার জায়গাও পাওয়া যায় না। লঞ্চ মালিকদের অবৈধ রোটেশন পদ্ধতিতে যাত্রীদের জিম্মি করে তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক লঞ্চ চালান।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বিকার দেখা যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ’সহ সংশ্লিষ্ট মহল’কে । এতে করে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের প্রশ্ন, আর কত লাভ করলে যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাববেন লঞ্চ মালিকরা? তাদের সীমাহীন লোভে যন্ত্রণা ভোগ করছি আমরা। লোকসানের ধোয়া তুলে গত দেড় মাস ধরে চলছে এ রোটেশন পদ্ধতি। বেআইনি এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক লেখালেখি। তবুও লঞ্চ চালানোর এই অবৈধ রীতি অব্যাহত-ই রেখেছেন মালিক পক্ষ।
জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে ফারহান নামে একটি লঞ্চ ও সন্ধ্যা ৬টায় তাসরিফ নামে আরেকটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছাড়া হতো। একই দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় হাতিয়া ঘাট থেকে ফারহান ও দুপুর ১টায় তাসরিফ নামে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেত। দুই কোম্পানির দুটি লঞ্চ উভয় ঘাট থেকে ছাড়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়া লাগত। এতে যাত্রীরা ভালো সেবা পেত। কিন্তু গত ১০ আগস্ট এই রুটে রোটেশন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ পদ্ধতিতে একই দিক থেকে একই কোম্পানির দুটি লঞ্চ চলাচল করবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে যেদিন ফারহান কোম্পানির দুটি লঞ্চ ঢাকা ছাড়বে সেদিনই তাসরিফ কোম্পানির দুটি লঞ্চ হাতিয়া ঘাট থেকে ছাড়বে। কিন্তু এই নিয়মকে অমান্য করে অর্থাৎ উভয় কোম্পানি সমঝোতার মাধ্যমে উভয় ঘাট থেকে দুটির পরিবর্তে একটি করে লঞ্চ ছাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাতিয়ার প্রাক্তন এমপি মোহাম্মদ আলি এ রুটে চলাচল করতে গিয়ে রোটেশন পদ্ধতির ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ, হয়রানি সহ নানান অসুবিধা প্রত্যক্ষ করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার পর গতসপ্তাহে মালিকপক্ষ পুনরায় চারটি লঞ্চ চালনা করেন। যা মালিকপক্ষের শুধুই লোকদেখানো কৌশল ছিলো। কেননা সদরঘাট থেকে হাতিয়া রুটে প্রতি সন্ধ্যায় দু’টি করে লঞ্চ ছাড়লেও একটি থেকে যায় তজুমদ্দিন-মনপুরা ঘাটে অপর একটিমাত্র লঞ্চ যায় হাতিয়ার ঘাটে।
বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে যেখা যায়, তাসরিফ-১, ২ এবং ফারহান-৮,১০ এর সবগুলো কেবিন ভর্তি, ডেকেও প্রচন্ড ভিড় এবং ২য় ও ৩য় তলার সকল অলিগলিতে নারী-পুরুষ অবাধে শুয়ে আছে। যার ফলে কেবিন ভাড়া করা যাত্রীরা ইচ্ছেমতো ঢুকতে বেরুতে পারছেনা। গলিতে শুয়ে থাকা মনপুরা থেকে উঠা আব্দুল করিম এবং এবং ভোলা থেকে রহিমা খতুন জানান, টিকেট বাদেও গলির ভাড়া এবং চাদরে থাকলে জনপ্রতি দিতে হয় ২শ’ টাকা করে।
এদিকে যাত্রীদের এতো ভিড়ের পরও মালিকদের দাবি, লোকসান সামলাতেই এই রোটেশন পদ্ধতিতে লঞ্চ চালাতে হচ্ছে।
এ সম্পর্কে ফারহান ১০ লঞ্চের জেনারেল ম্যানাজার আক্তার হোসেযন বলেন, লোকসান সামলাতেই মূলত এ পদ্ধতিতে লঞ্চ চালানো হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং যাত্রী সংকট না থাকলে তারা রোটেশন পদ্ধতি তুলে নেবেন বলেও জানান। হাতিয়ার তমরোদ্দি ঘাটের দায়িত্বরত মিরাজ সর্দার জানান, সবসময়ই যাত্রীর ভিড় থাকে, লোকসানের কোনও কারণ নেই। ঘাটের সুমন নামের একজনে জানান, যাত্রী এবং বিভিন্ন মালামালের চাপ সবসময় থাকে, লোকসান কোনো ভাবে হতে পারেনা। রোটেশন পদ্ধতিতে যাত্রীদের দূর্ভোগ,হয়রানি এখন চলতেই থাকে।
লঞ্চ মালিকদের লোকসান নামক বক্তৃতা মানতে নারাজ সাধারণ যাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জয়নাল আবেদীন’কে উক্ত রুটের তথ্য-চিত্র দেখানো পর তিনি জানান, আপনার মেসেজ আমরা পেয়েছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রিন্ট