ঢাকা , রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ভূমি অফিসের তহশিলদার শরিফুল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা Logo রোম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দূতাবাসে প্রবাসী স্বার্থ ও স্মার্ট বাংলাদেশ শীর্ষক সভা Logo ভাঙ্গায় পৃথক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত চার Logo কালুখালীতে চয়নের ১১ তম মৃত্যু বার্ষিক পালন Logo নগরকান্দায় বজ্রপাতে আহত শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ফিরেছে Logo আমতলীর প্রতারণা চক্রের মুল হোতা ইউপি সদস্য ডলার জালাল গ্রেফতার Logo চন্দনা কমিউটার ট্রেনের ফরিদপুরে স্টপেজের দাবীতে কাফনের কাপড় পড়ে মানববন্ধন Logo সালথায় রিসডা বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীর মাঝে উপকরণ বিতরণ Logo কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছে সদরপুরের কৃষকরা Logo বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবিতা পাঠ ও আলোচনা সভা
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় রাধা বিনোদ পালের নামে সেতু বানিয়ে উদ্বোধন করেলন ব্যারিস্টার সুমন

নিজের টাকায় কুষ্টিয়ায় বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নামে ৪৮তম সেতু বানিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামে সেতুর উদ্বোধন করা হয়।

গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খালের (জিকে খাল) ওপর ব্রিজ না থাকায় রাজাপুরসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেন। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুই পাড়ের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যেকোনো ধরনের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ব্রিজ ব্যবহার করতে হত। এতে নানা ধরনের সমস্যা ও কষ্ট হত পথচারী, কৃষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের।

গত বছরের ১৯ মার্চ ওই এলাকায় গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দেন। সেই লক্ষ্যে নিজের অর্থায়নে করে দিয়েছেন পাকা সেতু। এতে মিলন ঘটল দুই পাড়ের মানুষের। ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন ব্যারিস্টার সুমন।

রাজাপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, রাজাপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করলেন ব্যারিস্টার সুমন। খালের ওপর ব্রিজ না থাকার কারণে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হত। বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে অতিরিক্ত আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হত। এতে সময়, অর্থ ও কষ্ট অনেক বেশি হত। যুগ যুগ ধরে সাধনার পরে একটি ব্রিজ পেলাম। আমরা খুবই আনন্দিত। ব্যারিস্টার সুমন স্যারের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

স্থানীয়রা বলেন, রাজাপুর গ্রামের জিকে খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় বিচ্ছিন্ন ছিল। এতে অনেক কষ্টে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ হত। ব্যারিস্টার সুমন আমাদের কষ্টের কথা শুনে নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। সেতু হওয়ায় রাজাপুরসহ আশেপাশের এলাকার হাজারো মানুষ উপকৃত হলেন। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ওই এলাকার মানুষ ব্যারিস্টার সুমনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ও আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, নিজের এলাকার বাইরে এই প্রথম কুষ্টিয়ায় আমি একটি ব্রিজ করেছি। মাননীয় বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের সম্মানে আমার এ ব্রিজ উৎসর্গ করলাম। আমার কাছে এই ব্রিজের গুরুত্ব অনেক বেশি। ব্রিজটি এলাকার মানুষের অনেক উপকারে আসবে। প্রত্যেকটি মানুষ যদি একে অপরের পাশে দাঁড়ান, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে দেশপ্রেম আছে সেটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে আমরা অনেক ভালো করতে পারব। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মাঝে তিনিই উত্তম, যিনি মানবতার পথে বের হন। যে কারণে আমার ৪৮তম ব্রিজটি মাননীয় বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নামে উৎসর্গ করেছি।

উল্লেখ্য, রাধা বিনোদ পাল হচ্ছেন কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া সেই কৃতী সন্তান যার জন্য জাপান ‘বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হয়, সেই ট্রাইব্যুনালে ১১ জন বিচারকের একজন ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার সন্তান রাধা বিনোদ পাল। ওই ট্রায়ালে ১১ জন বিচারকের মধ্যে শুধু রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে জাপানের পক্ষে মি. পালের রায়ের জন্যই ওই ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা নমনীয় করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে জাপান দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শাস্তি এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এজন্য জাপানের সম্রাট বলেছিলেন, ‘যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু।’

 

 

ড. রাধা বিনোদ পাল কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের কৃতী সন্তান। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। তিনি ৮০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

ভূমি অফিসের তহশিলদার শরিফুল ইসলামের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় রাধা বিনোদ পালের নামে সেতু বানিয়ে উদ্বোধন করেলন ব্যারিস্টার সুমন

আপডেট টাইম : ১১:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজের টাকায় কুষ্টিয়ায় বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নামে ৪৮তম সেতু বানিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামে সেতুর উদ্বোধন করা হয়।

গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খালের (জিকে খাল) ওপর ব্রিজ না থাকায় রাজাপুরসহ আশপাশের এলাকার হাজারো মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতেন। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুই পাড়ের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যেকোনো ধরনের গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরের ব্রিজ ব্যবহার করতে হত। এতে নানা ধরনের সমস্যা ও কষ্ট হত পথচারী, কৃষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের।

গত বছরের ১৯ মার্চ ওই এলাকায় গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দেন। সেই লক্ষ্যে নিজের অর্থায়নে করে দিয়েছেন পাকা সেতু। এতে মিলন ঘটল দুই পাড়ের মানুষের। ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করলেন ব্যারিস্টার সুমন।

রাজাপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, রাজাপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করলেন ব্যারিস্টার সুমন। খালের ওপর ব্রিজ না থাকার কারণে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হত। বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে অতিরিক্ত আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হত। এতে সময়, অর্থ ও কষ্ট অনেক বেশি হত। যুগ যুগ ধরে সাধনার পরে একটি ব্রিজ পেলাম। আমরা খুবই আনন্দিত। ব্যারিস্টার সুমন স্যারের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

স্থানীয়রা বলেন, রাজাপুর গ্রামের জিকে খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় বিচ্ছিন্ন ছিল। এতে অনেক কষ্টে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ হত। ব্যারিস্টার সুমন আমাদের কষ্টের কথা শুনে নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। সেতু হওয়ায় রাজাপুরসহ আশেপাশের এলাকার হাজারো মানুষ উপকৃত হলেন। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ওই এলাকার মানুষ ব্যারিস্টার সুমনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ও আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, নিজের এলাকার বাইরে এই প্রথম কুষ্টিয়ায় আমি একটি ব্রিজ করেছি। মাননীয় বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের সম্মানে আমার এ ব্রিজ উৎসর্গ করলাম। আমার কাছে এই ব্রিজের গুরুত্ব অনেক বেশি। ব্রিজটি এলাকার মানুষের অনেক উপকারে আসবে। প্রত্যেকটি মানুষ যদি একে অপরের পাশে দাঁড়ান, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে দেশপ্রেম আছে সেটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে আমরা অনেক ভালো করতে পারব। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মাঝে তিনিই উত্তম, যিনি মানবতার পথে বের হন। যে কারণে আমার ৪৮তম ব্রিজটি মাননীয় বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের নামে উৎসর্গ করেছি।

উল্লেখ্য, রাধা বিনোদ পাল হচ্ছেন কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া সেই কৃতী সন্তান যার জন্য জাপান ‘বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন করা হয়, সেই ট্রাইব্যুনালে ১১ জন বিচারকের একজন ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার সন্তান রাধা বিনোদ পাল। ওই ট্রায়ালে ১১ জন বিচারকের মধ্যে শুধু রাধা বিনোদ পালই জাপানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রায় দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে জাপানের পক্ষে মি. পালের রায়ের জন্যই ওই ট্রায়ালের কয়েকজন বিচারক প্রভাবিত হয়ে তাদের রায় কিছুটা নমনীয় করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে জাপান দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন শাস্তি এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এজন্য জাপানের সম্রাট বলেছিলেন, ‘যতদিন জাপান থাকবে, বাঙালি খাদ্যাভাবে, অর্থকষ্টে মরবে না। জাপান হবে বাঙালির চিরকালের নিঃস্বার্থ বন্ধু।’

 

 

ড. রাধা বিনোদ পাল কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের কৃতী সন্তান। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। তিনি ৮০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।