ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি, ক্ষেত-খামারসহ সংসার ছেড়ে পালিয়েছেন পুরুষ সদস্যরা। এদিকে পেঁয়াজ, রসুন আর সোনালী আঁশ পাটক্ষেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এই অবস্থায় চোখের সামনে নষ্ট হতে বসা ছোট পাট রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন এলাকার নারী ও শিশুরা। চৈত্রের কড়া রোদ উপেক্ষা করে পালা করে সকাল-বিকেল কাজ করছেন তারা।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর আবার মাঝে একটু বিরতির পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটক্ষেত পরিচর্যা করার এমন চিত্র দেখা গেছে গ্রামের নারীদের। নারীদের সঙ্গে ছোট শিশুদেরও দেখা গেছে।
ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার পর পাঁচটি মামলায় প্রায় ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে কয়েকটি এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, অন্য এলাকার কোনো পুরুষ মানুষ এ এলাকায় কাজ করতে আসতে চাচ্ছেন না। ফলে কৃষকশূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা।
সালথার ঘটনায় উপজেলার সোনাপুর, ভাওয়াল ও রামকান্তপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকাকে সরাসরি জড়িত বলে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব এলাকার কয়েকটি ফসলি জমির মাঠ ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক রয়েছেন।
পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কয়েক নারী বলেন, ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ২৬১ জন আসামি ছাড়াও অজ্ঞাত আরও হাজার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে যে কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করার সুযোগ রয়েছে। তাই গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে দোষী-নির্দোষী সবাই পলাতক রয়েছেন।
এসব এলাকার কৃষক পরিবারের কয়েকজন নারী হালিমা বেগম, ফুল জান, নাসরিন ও পারভিন বেগম। তাদের দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমানে বাজার করার টাকা নেই। স্বামীরা অন্যের ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তো ভয়ে তারা সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রোজার বাজার-সদাই করতে পারেনি। বাড়িতে আমরা সন্তান নিয়ে না খেয়ে মরার দশা।’
আলেয়া বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘কিস্তির টাকা দিয়ে ফসল চাষ করি আমরা। এ বছর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি ঠিকমতো পাট চাষাবাদ না করা হয় তাহলে পাটও নষ্ট হবে। আবার চলছে লকডাউন। সব মিলিয়ে আমাদের বেঁচে থাকাই কষ্টকর।’
উল্লেখ্য, লকডাউনকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে গত ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এসময় দুটি সরকারি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন তারা। এ ঘটনায় দুই যুবক নিহত হন। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকারকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রিন্ট