ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশে যাচ্ছে চলনবিলের শুঁটকি

-‘‘এ’ গ্রেডের বা ভালো মানের শুঁটকি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে। মূলত ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই এখানকার শুঁটকি বিদেশে যায়। আর ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, সৈয়দপুর ও তিস্তা অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

দেশের বৃহৎ জলাভূমি চলনবিলে এখন থই থই পানি নেই। পানি অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। ফলে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। সুতিজাল, বেড়জাল, পলো দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। পাশেই বাঁশের ছাউনিতে বসানো হয়েছে শুঁটকির অস্থায়ী চাতাল। সেই চাতালে মিঠাপানির বিভিন্ন ধরনের মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি।

 

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চলনবিল অঞ্চলে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বিলের দিকে এগোতেই নাকে আসে শুঁটকির গন্ধ। আলাপ করে জানা যায়, এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও।

 

আড়ুয়া পাঙ্গাসী গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী সাচ্চু মণ্ডল জানান, চলনবিলের শুঁটকি যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

একই গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, এসময় এখানে অস্থায়ী চাতাল বসে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

 

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানভেদে এসব শুঁটকি ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। এরমধ্যে ‘এ’ গ্রেডের বা ভালো মানের শুঁটকি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে। মূলত ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই এখানকার শুঁটকি বিদেশে যায়। ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, সৈয়দপুর ও তিস্তা অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

-এসময় এখানে অস্থায়ী চাতাল বসে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

শুঁটকির আকারভেদে দামও ভিন্ন। ছোট আকারের মাছের শুঁটকি প্রতি মণ ১০-২২ হাজার এবং বড় মাছের শুঁটকি ২০-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আড়ুয়া পাঙ্গাসী এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী ফকির। গত বছর তার চাতালে প্রায় ২০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার তার চেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে এ ব্যবসায়ীর। তার কাছ থেকে ঢাকা ও সৈয়দপুর এলাকার পাইকাররা শুঁটকি কিনে নিয়ে যান।

 

ইউসুফ আলী জানান, আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি হয়। প্রতি মণ তাজা মাছ শুকালে ১৫ কেজি শুঁটকি পাওয়া যায়। এভাবে প্রায় তিন মণ তাজা মাছ শুকালে এক মণ শুঁটকি হয়।

 

চাতালে শুঁটকি শুকানোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন রুবি খাতুন। তিনি বলেন, ‘শুঁটকি ব্যবসায় লাভ যেমন আছে, লোকসানও আছে। ভালোভাবে মাছ শুকানো না হলে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে ভালো মানের শুঁটকির কদর বেশি। বড় ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে বিদেশে বিক্রি করেন।’

চলনবিলের শুঁটকির সুনাম ও চাহিদা দুটোই রয়েছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান।

 

তিনি বলেন, আমরা শুঁটকির মান বাড়ানোর জন্য চাতাল মালিকদের প্রশিক্ষণ দেই। জেলায় এবার অন্তত ৬০টি চাতালে ৩০২ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ২৩৫ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন। আশা করি, এ অঞ্চলের শুঁটকি ব্যবসা আগামীতে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২ দেশে যাচ্ছে চলনবিলের শুঁটকি

আপডেট টাইম : ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

দেশের বৃহৎ জলাভূমি চলনবিলে এখন থই থই পানি নেই। পানি অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। ফলে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। সুতিজাল, বেড়জাল, পলো দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। পাশেই বাঁশের ছাউনিতে বসানো হয়েছে শুঁটকির অস্থায়ী চাতাল। সেই চাতালে মিঠাপানির বিভিন্ন ধরনের মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি।

 

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চলনবিল অঞ্চলে দেখা যায় এমন দৃশ্য। বিলের দিকে এগোতেই নাকে আসে শুঁটকির গন্ধ। আলাপ করে জানা যায়, এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও।

 

আড়ুয়া পাঙ্গাসী গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী সাচ্চু মণ্ডল জানান, চলনবিলের শুঁটকি যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

একই গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, এসময় এখানে অস্থায়ী চাতাল বসে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

 

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানভেদে এসব শুঁটকি ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। এরমধ্যে ‘এ’ গ্রেডের বা ভালো মানের শুঁটকি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ ১০-১২টি দেশে। মূলত ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই এখানকার শুঁটকি বিদেশে যায়। ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ঢাকা, সৈয়দপুর ও তিস্তা অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

-এসময় এখানে অস্থায়ী চাতাল বসে। এসব চাতালে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

শুঁটকির আকারভেদে দামও ভিন্ন। ছোট আকারের মাছের শুঁটকি প্রতি মণ ১০-২২ হাজার এবং বড় মাছের শুঁটকি ২০-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আড়ুয়া পাঙ্গাসী এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী ফকির। গত বছর তার চাতালে প্রায় ২০০ মণ শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার তার চেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে এ ব্যবসায়ীর। তার কাছ থেকে ঢাকা ও সৈয়দপুর এলাকার পাইকাররা শুঁটকি কিনে নিয়ে যান।

 

ইউসুফ আলী জানান, আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি হয়। প্রতি মণ তাজা মাছ শুকালে ১৫ কেজি শুঁটকি পাওয়া যায়। এভাবে প্রায় তিন মণ তাজা মাছ শুকালে এক মণ শুঁটকি হয়।

 

চাতালে শুঁটকি শুকানোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন রুবি খাতুন। তিনি বলেন, ‘শুঁটকি ব্যবসায় লাভ যেমন আছে, লোকসানও আছে। ভালোভাবে মাছ শুকানো না হলে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে ভালো মানের শুঁটকির কদর বেশি। বড় ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে বিদেশে বিক্রি করেন।’

চলনবিলের শুঁটকির সুনাম ও চাহিদা দুটোই রয়েছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান।

 

তিনি বলেন, আমরা শুঁটকির মান বাড়ানোর জন্য চাতাল মালিকদের প্রশিক্ষণ দেই। জেলায় এবার অন্তত ৬০টি চাতালে ৩০২ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ২৩৫ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন। আশা করি, এ অঞ্চলের শুঁটকি ব্যবসা আগামীতে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।


প্রিন্ট