বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনটি পরিত্যাক্ত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। লোকবল ও ট্রেন সংকটে এখানে রেলওয়ের কোন কার্যক্রম নেই। ষ্টেশন ঘরটি তালাবদ্ধ হয়ে জনাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
ইতিমধ্যে এ রেলপথ হতে দুইটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ও দুইটি মেইল ট্টেন প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ রেলপথে চলাচলকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। তারা বন্ধ ট্রেনগুলো চালুর দাবি জানিয়েছেন।
স্হানীয়রা জানান, বৃটিশ আমল থেকে ভারতবর্ষের রেল যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ের রুট হিসাবে পরিচিত গোয়ালন্দ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন। তৎকালিন ভারত বর্ষের রাজধানী মুর্শিদাবাদ, কলকাতা অথবা শিলিগুড়ির সাথে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ঢাকা সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর নৌপথ হয়ে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন ছিলো যাতায়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গোয়ালন্দের পদ্মা নদীর শতশত মন রুপালি ইলিশ তৎকালীন সময়ে ট্রেনযোগে এ ষ্টেশন হতে ভারতের বিভিন্ন স্হানে রপ্তানী হত।
গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রব মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মল কুমার চক্রবর্তী সহ কয়েকজন বলেন, গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে ষ্টেশনটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত। বঙ্গবন্ধু এই রেলওয়ে ষ্টেশনে দাড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ভারত বর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহাত্মাগান্ধী কুমিল্লায় দাঙ্গার সময় এই গোয়ালন্দ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেছেন। দুঃখের বিষয় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে ষ্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ ট্রেনগুলো পুনরায় চালুর দাবী জানাচ্ছি।
ব্যাংক কর্মকর্তা সাদেকুল্লা মোবারক বলেন, গেয়ালন্দ ঘাট থেকে আগে সরাসরি রাজশাহী পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারতাম। ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।এ ছাড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে নারী পুরুষদের জন্য কোন বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা নাই।
রেলওয়ে ষ্টেশনের স্হানীয় হোটেল ব্যবসায়ী ইউসুফ মোল্লা, সফর আলী, শামসুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, ট্রেন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় যাত্রী সংকটে তারা লোকসানের মুখে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দোকানপাট, হোটেল ও রেস্তোরা।
এছাড়া মালবাহী ট্রেন না থাকায় ব্যবসায়ীদের সড়ক পথে মালামাল পরিবহন করতে কয়েকগুন খরচ বেশি হচ্ছে।
গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে ষ্টেশনের সহকারী ষ্টেশন মাষ্টার (বর্তমানে পাচুরিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনে প্রেষনে দায়িত্ব পালন করছেন) সুজাত শেখ বলেন, গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে ষ্টেশনটি জনবল সংকটের কারনে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছে। এখানে রেলওয়ের কোন কার্যক্রম নেই। শুধু ষ্টেশনটিতে কিছু সরকারি টিকিট থাকায় ওগুলো দেখার জন্য আমি দায়িত্ব পালন করছি।
গোয়ালন্দ ঘাট ( দৌলতদিয়া) রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার সিএম আক্তার হায়দার বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে খুলনাগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ও রাজশাহী গামী যমুনা এক্সপ্রেস প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া এখান থেকে বর্তমানে কোন আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন নেই।
সৈয়দপুর থেকে পন্যবাহী শীলিগুড়ি ট্রেনটি বিট্রিশ আমল থেকে এরুটে চলাচল করতো । সরকারী তালিকা ভূক্ত রেজিষ্টারে ৫২ নাম্বার টাইম টেবিলে এখনো ৫১১/৫১২ শিলিগুড়ি ট্টেনটি টাইম টেবিলে উল্লেখ আছে। তবে দীর্ঘ দিন এ ট্রেনটি চলাচল করে না। বর্তমানে এ ষ্টেশনে একটি নকশীকাঁথা মেইল ও একটি সাটল লোকাল ট্রেন যাতায়াত করছে। তাতে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকে।
প্রিন্ট