বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে আজ রবিবার ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ১৯৯০ সালে ফ্রাঁসোয়া মিতেরার সফরের ৩৩ বছর পর ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর।ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস বলেছে, ৩৩ বছর আগে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সফরে বন্যাদুর্গত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ছিল। বিগত বছরগুলোতে দুই দেশ অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের অংশীদারি আরো সুসংহত হবে।ফ্রান্স দূতাবাস বলেছে, বাংলাদেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। এই বাংলাদেশের পাশে থাকার ব্যাপারে ফ্রান্স অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরো অনেক বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে আলোচনা করবেন।সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার এম শহীদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর হবে ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার যথেষ্ট মিল আছে। দুই দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক ভাবনাতেই ‘অন্তর্ভুক্তির’ বিষয় আছে।
শহীদুল হক বলেন, প্রযুক্তি খাতেও বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বড় সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ভূরাজনীতি, ব্যবসাসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যাপারে ফ্রান্সের আগ্রহ আছে।২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্যারিস সফরের সময় যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ তাদের অংশীদারির মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে সম্পর্ক আরো জোরদারের কথা বলেছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আগ্রহের বিষয়ে দুই দেশ একটি পত্র স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০২১ সালে ফ্রান্স বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল।
বাংলাদেশ এবার ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে পারে। এ ছাড়া ফ্রান্স কিছু উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায়। বাংলাদেশ দুটি কার্গো উড়োজাহাজসহ ১০টি এয়ারবাস কিনতে রাজি হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, ফ্রান্স থেকে স্যাটেলাইট কেনার ব্যাপারে ম্যাখোঁর সফরে একটি চুক্তি হতে পারে। এ ছাড়া ফ্রান্সের উন্নয়ন সংস্থা এএফডি থেকে বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে।কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ফ্রান্সের এয়ারবাস থেকে ১০টি এয়ারক্রাফট কেনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারে বাংলাদেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ফ্রান্সের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করার কথা জানাতে পারে।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ নয়াদিল্লি থেকে আজ সন্ধ্যার দিকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছাবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রাতেই ঢাকার একটি হোটেলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশ ভোজ আয়োজন করেছেন তিনি।
আগামীকাল সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।
ওই বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা হতে পারে। সফর শেষে আগামীকালই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।