পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। গত কয়েক বছরে ভাল দাম পাওয়ায় এবারও স্বপ্নটা বড়। আর তাই তারা একে তুলনা করছেন সোনার সঙ্গে। পেঁয়াজ বীজকে চাষিরা বলছেন কালো সোনা।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত রয়েছে চাষিরা। সকাল থেকেই পরিবারের বিভিন্ন বয়সীদের নিয়ে সকলেই ক্ষেত থেকে বীজ তোলার কাজ করে সময় পার করছেন। অনেক কৃষক-কৃষাণী চুক্তিতে এই কাজে অংশ নিচ্ছে।
অম্বিকারপুর এলাকার গোবিন্দুপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো আরো অনেকেই বলেন, ‘এই মৌসুমে বীজ তোলার কাজ করে যে পেঁয়াজ পাই, তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।’
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে ১৭০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে এই বীজ। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলার প্রতিবছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় এক হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের এক হাজার ৫৬ মেট্রিকটনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো।
তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে করে থাকে।
সরকারি এই কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে। এই কারণে এই ফসলকে কালোসোনা হিসাবে অভিহিত করা হয়।’
জেলা সদর উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানান, প্রচণ্ড রোদ থাকার পরও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভাল ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্যে ছিল প্রতি মণ দুই লাখ টাকার মতো। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বিঘা প্রতি ভালই আয় হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভূক্ত পেঁয়াজ বীজ চাষি আকবর খান বলেন, ‘এই বছর চার বিঘা জমিতে বীজের চাষ করছি। খুব ভালো হইছে ক্ষেত। আশা করছি, আট মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।
একই গ্রামের পেঁয়াজ বীজের চাষ করেছেন লাভলি- ইমতিয়াজ দম্পতি।
এই দম্পতি বলেন, ‘পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত। আমাদের এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না। আমাদের কথা হলো, সরকারের যেহেতু বীজের দরকার তবে কেন সকলের কাছ থেকে নিবে না।’
এদিকে গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেয়াজ বীজ চাষী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাগো আবহাওয়া বীজ উৎপাদনে জন্য খুবই উপযোগী। আগামীতে আরও জমিতে ‘কালো সোনার’ চাষ করব।’
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়, আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেওয়া হয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো বীজ চাষ। ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
প্রিন্ট