বিমান কার্যালয় বলাকায় গত মঙ্গলবার বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এয়ারবাসের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমান কার্যালয় বলাকায় গত মঙ্গলবার বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এয়ারবাসের দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমান চলাচল খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব উড়োজাহাজ কিনলে বিমানের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাইলটসহ অন্যান্য জনবলের ঘাটতি, দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যমান উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে এয়ারবাসের কাছ থেকে ব্যয়বহুল উড়োজাহাজ কিনলে তার সঠিক ব্যবহার কতটা নিশ্চিত হবে, এ নিয়ে তাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বিমান সূত্র জানায়, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব বিমানের পরিচালনা পর্ষদের বোর্ডে গত ৩ মে অনুমোদন পেয়েছে। এরপর ৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এসংক্রান্ত যৌথ ঘোষণা সই হয়। পরে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কিনবে বিমান। পরবর্তী সময়ে আলোচনা সাপেক্ষে আরো দুটি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ কেনা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০২৬ সালে দুটি এয়ারবাস বহরে যুক্ত হবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। এখন ক্রয় পদ্ধতি, দাম, অর্থের উৎসসহ নানা কারিগরি বিষয় যুক্ত করে একটি প্রফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বহর পরিকল্পনা এবং কারিগরি ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে দুটি এয়ারবাস আনা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দেশের বিমানবহরে এয়ারবাস ও বোয়িং আছে। তবে আমাদের শুধু বোয়িং রয়েছে, কিন্তু একটিও এয়ারবাস নেই। এয়ারবাসের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী তারা এভিয়েশন খাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণেও সহায়তা দেবে।’
জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম গতকাল বলেন, ‘এয়ারবাসের সঙ্গে আমাদের প্রথম বৈঠক হয়েছে। উড়োজাহাজ ক্রয়ের বিষয়ে আমাদের কয়েকটি কমিটি আছে। এয়ারবাস যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার ওপর আমরা আলোচনা করেছি। কমিটিগুলোর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের যেসব চাহিদা আছে, সেগুলো তাদের জানিয়েছি। আমরা কিভাবে এগোব, আর্থিকভাবে বিমান কিভাবে লাভবান হবে—সেই বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
শফিউল আজিম বলেন, ‘নতুন উড়োজাহাজ সরবরাহে কমপক্ষে দুই বছর লেগে যায়। নতুন উড়োজাহাজ এলে আমরা বিমানের নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করব। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি নতুন রুট চালুর সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা আমাদের পরিকল্পনারই অংশ।’
এয়ারবাস পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা, যারা বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের নকশা, নির্মাণ ও বিপণন করে। ইউরোপভিত্তিক এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন ও স্পেনে তাদের বড় অফিস ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। এয়ারবাসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং, যাদের কাছ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বহরে থাকা নতুন উড়োজাহাজগুলো কিনেছে।
বর্তমানে বিমানবহরে মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে বোয়িংয়ের ১৬টি, পাঁচটি ড্যাশ-৮। ১০টি নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১টি। বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে বিমানের আকাশসেবার চুক্তি থাকলেও মাত্র ১৬টি দেশে এখন কার্যক্রম বিদ্যমান। বিমানবহরে নতুন এয়ারক্রাফটগুলো যুক্ত হলে বন্ধ রুটসহ নতুন নতুন রুট চালু হবে।
এদিকে বোয়িং তাদের ড্রিমলাইনার বোয়িং-৭৮৭৯ এবং ৭৮৭-১০ উড়োজাহাজ বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে এয়ারবাস যুক্ত হলে সংস্থাটির খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বোয়িংয়ের এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারতের বোয়িং কমার্শিয়াল মার্কেটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভ শাল্টে বলেন, ‘বিমান যদি বর্তমানে নতুন কোনো ব্র্যান্ডের (এয়ারবাস) এয়ারক্রাফট কেনে, তাহলে তাদের খরচ অনেকাংশে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তবে বিমান যদি নতুন ব্র্যান্ডের এয়ারক্রাফট নেয়, সে ক্ষেত্রে তাদের দুই সেট টেকনিক্যাল টিম, দুই সেট পাইলট, দুই সেট ট্রেনিং টিম, দুই সেট সিমুলেটর লাগবে। এতে বিমানের খরচ কয়েক গুণ বাড়বে।’
এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের এমডি এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, মিশ্র বহর ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। পাইলটসহ অন্যান্য জনবলের ঘাটতি এবং দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার কারণে উড়োজাহাজের সঠিক ব্যবহার হয় না। এই সংস্কৃতি থেকে বিমানকে বেরিয়ে আসতে হবে।