বিশ্বজোড়া রয়েছে চাঁদপুরের ইলিশের সুখ্যাতি। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। চাঁদপুরের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইলিশ। কিন্তু ভরা মৌসুমেও সেই চাঁদপুরেই চলছে ইলিশের আকাল। এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নদী এবং ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ইলিশ। চাঁদপুর, হাইমচরের সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশের স্বাদ এখন নাগালের বাইরে।
আজ যে ইলিশ সংকট চলছে, তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। জেলেদের আগ্রাসী ভূমিকাই মূলত আজকের ইলিশ সংকট। জাটকা এবং মা ইলিশ রক্ষার কর্মসূচিতে জেলেদের অসহযোগিতামূলক আচরণই আজকের ইলিশ সংকটের অন্যতম কারণ। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ইলিশ উৎপাদনে সংকট তৈরি করছে। ইলিশকে রক্ষা করতে এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। ইলিশ শুধু আমাদের মাছ এবং আমিষের চাহিদাই পূরেণ করে না, ইলিশ রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করি। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। ইলিশের আকাল দূর করে জেলেদের মুখে হাসি ফুটানোও সম্ভব কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। তবে সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে কঠিন কঠোর হতে হবে এবং তার সঙ্গে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জেলেদের সচেতন করতে হবে যেন তারা কারেন্ট জাল ব্যবহার না করে, অন্যদিকে কারেন্ট জাল উৎপাদর বন্ধে আরও কঠোর এবং কঠিন হতে হবে রাষ্ট্রের কর্র্তৃপক্ষকে।
কারেন্ট জাল শুধু মাছেরই শত্রু নয় এই জাল পরিবেশের জন্যও হুমকি। চাঁদপুরের মেঘনাতে অসংখ্য ডুবোচর এবং বেশ কিছু চর জেগে উঠেছে। এই চরগুলো নদীর নাব্য ও স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। এতে ইলিশের স্বাভবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়। ইলিশের বিচরণে নদীর যে নাব্য ও গভীরতা প্রয়োজন চরগুলো সেই নাব্য ও গভীরতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ডুবোচর এবং নতুন জেগে ওঠা চরগুলো যদি খনন করা হয় তবে নদীর নাব্য রক্ষা ও বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদপুরে ইলিশের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি নদীর দুই তীরের নিরাপত্তাও মজবুত হবে। নদীদূষণ, কারেন্ট জাল উৎপাদন ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, জাটকা রক্ষায় কঠোর হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর এবং জনগণকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা সর্বোচ্চ বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসনের কঠোরতাই বৃদ্ধি করতে পারে ইলিশের উৎপাদন।
জাটকা এবং মা ইলিশ রক্ষার মৌসুমে যদি আমরা জাটকা ও মা ইলিশকে রক্ষা করতে না পারি, তবে আগামী দিনে ইলিশ সোনার হরিণ হয়ে উঠবে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও পড়বে। আমরা আশা করি, সরকার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির অন্যান্য মাছের উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। আমাদের মাছের চাহিদা পূর্ণ করে বিদেশেও মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) আয় করা সম্ভব হবে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। স্বচ্ছতা, সচেতনতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। অন্যথায় এই সংকট আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। জেলেদের হাহাকার বাড়বে, তাদের জীবনযাত্রার মান নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছবে এবং আমরা ইলিশের বহুমাত্রিক উপকারিতা এবং এই মাছের স্বাদ থেকে নিশ্চিতভাবেই বঞ্চিত হব। এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, নিশ্চয়ই কেউ তা চাইবেন না।