ঢাকা , বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

দ্বীপ হাতিয়ায় আলো ছড়াচ্ছে ‘ওয়ান ডে স্কুল’

২০১৩ সাল থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইংরেজি শেখাচ্ছে ‘ওয়ান ডে স্কুল’। এই স্কুলের কার্যক্রমের ফলে অনেকেই ইংরেজির ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে জায়গা করে নিচ্ছে তারা।

এই ‘ওয়ান ডে স্কুল’ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান মঞ্জু। তিনি হাতিয়া উপজেলার তমরুদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামের মহিউদ্দিন মিয়ার ছেলে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাস করে ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। ছোটবেলা থেকে ইংরেজির প্রতি আগ্রহ এবং দ্বীপ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি কমাতে এমন উদ্যোগ নেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রাইমারি স্কুল থেকে চালু হয় বিনামূল্যে ইংরেজি শেখানোর ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম। যা পরবর্তীতে হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় চালু হয়। এ পর্যন্ত হাতিয়ার ৬টি কলেজ, প্রায় ২৫টি হাইস্কুল, ১৩টি মাদরাসা ও ৬৫টি প্রাইমারি স্কুলে চালু রয়েছে এ কার্যক্রম। হাতিয়ার বাইরে মনপুরা, ভোলা ও চরফ্যাশনের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় চালু আছে ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম।

তাহমিদা ফারিন মিম নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই। আগে ইংরেজিকে অনেক কঠিন মনে করতাম। ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রমের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা সহজ হয়েছে।

আবদুল আহাদ নামে এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে, আগে ইংরেজি বুঝতাম না, ভয় পেতাম। মঞ্জু সারের কাছ থেকে ইংরেজি শিখে এখন ইংরেজি ধারাভাষ্যসহ বিভিন্ন ইংরেজি সিনেমা বুঝতে পারি। ইংরেজি দৈনিক পড়তে পারি। ইংরেজি এখন আমাদের কাছে অনেক সহজ।

সাবিহা তুসিন নামে আরেক শিক্ষার্থী  বলে, আমরা হাতিয়া দ্বীপে বসবাস করি। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদের বেড়ে উঠতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিকে ভয় পায় এবং শেখার কোনো মাধ্যমও নেই। তবে ওয়ান ডে স্কুলের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা সহজ। আমার মতে সবারই ইংরেজি শেখা উচিত।

আকবর হোসেন নামে এক অভিভাবক  বলেন, আমার ছেলে এ বছর নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এর অবদান ওয়ান ডে স্কুলের। আমার ছেলের জন্য আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই।

তাসমেরি তাসু নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম খুবই প্রশংসনীয়।  আগে যারা ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় পেতো তারা অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে এখানে ইংরেজি শিখে।

সাগরিয়া নিউ মডেল স্কুলের সহকারী প্রধান মো. বেলায়েত হোসেন  বলেন, ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রমটি একটি মহৎ উদ্যোগ। একজন অভিভাবক হিসেবেও আমি এমন উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই এটি চালু থাকুক। আমরা সর্বদা পাশে আছি।

ওয়ান ডে স্কুলের উদ্যোক্তা মুশফিকুর রহমান মঞ্জু  বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইংরেজি বিষয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর অধ্যায়ন করে শুধুমাত্র ইংরেজি শেখার আগ্রহ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। আমাদের হাতিয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ভালো ফলাফল করতে পারতো না। তাই ২০১৩ সাল থেকে বিনামূল্যে ইংরেজি শেখার কার্যক্রম হাতে নিই। এখন শিক্ষার্থীরা ইংরেজিকে ভয় পায় না।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় এনজিও দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রেডিও সাগর দ্বীপ ৯৯.২ এফএমের মাধ্যমে আমেরিকান দ্রুতাবাসের অধীনে ‘এসো ইংরেজি শিখি’ প্রোগ্রামটির মাধ্যমে পুরো হাতিয়ায় স্পোকেন ইংলিশের কার্যক্রম শুরু করি। এছাড়াও আমি গবেষণা করে ইংরেজি শেখার কিছু পদ্ধতি চালু করেছি। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধের দিন আমরা ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে। অনেকে বাংলাদেশের বাহিরে ও ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

দ্বীপ হাতিয়ায় আলো ছড়াচ্ছে ‘ওয়ান ডে স্কুল’

আপডেট টাইম : ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩

২০১৩ সাল থেকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইংরেজি শেখাচ্ছে ‘ওয়ান ডে স্কুল’। এই স্কুলের কার্যক্রমের ফলে অনেকেই ইংরেজির ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে জায়গা করে নিচ্ছে তারা।

এই ‘ওয়ান ডে স্কুল’ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান মঞ্জু। তিনি হাতিয়া উপজেলার তমরুদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামের মহিউদ্দিন মিয়ার ছেলে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পাস করে ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। ছোটবেলা থেকে ইংরেজির প্রতি আগ্রহ এবং দ্বীপ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি কমাতে এমন উদ্যোগ নেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রাইমারি স্কুল থেকে চালু হয় বিনামূল্যে ইংরেজি শেখানোর ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম। যা পরবর্তীতে হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় চালু হয়। এ পর্যন্ত হাতিয়ার ৬টি কলেজ, প্রায় ২৫টি হাইস্কুল, ১৩টি মাদরাসা ও ৬৫টি প্রাইমারি স্কুলে চালু রয়েছে এ কার্যক্রম। হাতিয়ার বাইরে মনপুরা, ভোলা ও চরফ্যাশনের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় চালু আছে ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম।

তাহমিদা ফারিন মিম নামে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই। আগে ইংরেজিকে অনেক কঠিন মনে করতাম। ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রমের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা সহজ হয়েছে।

আবদুল আহাদ নামে এক অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে, আগে ইংরেজি বুঝতাম না, ভয় পেতাম। মঞ্জু সারের কাছ থেকে ইংরেজি শিখে এখন ইংরেজি ধারাভাষ্যসহ বিভিন্ন ইংরেজি সিনেমা বুঝতে পারি। ইংরেজি দৈনিক পড়তে পারি। ইংরেজি এখন আমাদের কাছে অনেক সহজ।

সাবিহা তুসিন নামে আরেক শিক্ষার্থী  বলে, আমরা হাতিয়া দ্বীপে বসবাস করি। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদের বেড়ে উঠতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিকে ভয় পায় এবং শেখার কোনো মাধ্যমও নেই। তবে ওয়ান ডে স্কুলের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা সহজ। আমার মতে সবারই ইংরেজি শেখা উচিত।

আকবর হোসেন নামে এক অভিভাবক  বলেন, আমার ছেলে এ বছর নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এর অবদান ওয়ান ডে স্কুলের। আমার ছেলের জন্য আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই।

তাসমেরি তাসু নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম খুবই প্রশংসনীয়।  আগে যারা ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় পেতো তারা অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে এখানে ইংরেজি শিখে।

সাগরিয়া নিউ মডেল স্কুলের সহকারী প্রধান মো. বেলায়েত হোসেন  বলেন, ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রমটি একটি মহৎ উদ্যোগ। একজন অভিভাবক হিসেবেও আমি এমন উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই এটি চালু থাকুক। আমরা সর্বদা পাশে আছি।

ওয়ান ডে স্কুলের উদ্যোক্তা মুশফিকুর রহমান মঞ্জু  বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইংরেজি বিষয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর অধ্যায়ন করে শুধুমাত্র ইংরেজি শেখার আগ্রহ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। আমাদের হাতিয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ভালো ফলাফল করতে পারতো না। তাই ২০১৩ সাল থেকে বিনামূল্যে ইংরেজি শেখার কার্যক্রম হাতে নিই। এখন শিক্ষার্থীরা ইংরেজিকে ভয় পায় না।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় এনজিও দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার রেডিও সাগর দ্বীপ ৯৯.২ এফএমের মাধ্যমে আমেরিকান দ্রুতাবাসের অধীনে ‘এসো ইংরেজি শিখি’ প্রোগ্রামটির মাধ্যমে পুরো হাতিয়ায় স্পোকেন ইংলিশের কার্যক্রম শুরু করি। এছাড়াও আমি গবেষণা করে ইংরেজি শেখার কিছু পদ্ধতি চালু করেছি। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধের দিন আমরা ওয়ান ডে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে। অনেকে বাংলাদেশের বাহিরে ও ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে।