রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
নাটোরের লালপুরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। এতে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত রোগীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২১ টি।একজন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ১০ জন কনিষ্ঠ পরামর্শক (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক), ৭ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন করে প্যাথলজিস্ট, এনেসথেটিস্ট ও ডেন্টাল সার্জন সহ ২১ জন চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ২ জন। অস্ত্রোপচার (সার্জারি), মেডিসিন, শিশু, অর্থোপেডিক, কার্ডিও, চক্ষু, ইএনটি (নাক, কান ও গলা), যৌন ও চর্ম বিভাগে কোন চিকিৎসক নেই।
.
এছাড়া অন্তবিভাগ মেডিকেল অফিসার (আই এম ও), জরুরী বিভাগ মেডিকেল অফিসার (ই এম ও), প্যাথলজিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে নিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে দুই জন চিকিৎসক আনা হয়েছে। চিকিৎসক সংকটের মধ্যেই আগামী মাসে (জুন) একজন চিকিৎসক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং একজনের বদলি হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবলেও রয়েছে তীব্র সংকট।
.
তৃতীয় শ্রেণীর ৭৯টি পদের মধ্যে ৩৬ টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ২৬টি পদের মধ্যে ২৩ টি পদ শূন্য রয়েছে। তন্মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারীর ৪০ টি পদের বিপরীতে আছেন ২২ জন। ১৮টি পদ শূন্য। চতুর্থ শ্রেণীর পদে ১জন ল্যাবঃ এটেনডেন্ট, ১জন জরুরী বিভাগ এটেনডেন্ট, ৫ জন অফিস সহায়ক (এম এল এস এস), ৩ জন ওয়ার্ড বয়, ২ জন আয়া, ৩ জন কুক, ১ জন মালি, ৪ জন নিরাপত্তা রক্ষী, ৫ জন সুইপার থাকার কথা থাকলেও ১জন অফিস সহায়ক ও ২জন সুইপার ছাড়া বাকি পদগুলো শুন্য রয়েছে। এতে হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও মান সম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
.
এমন অবস্থায় জরুরী বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। নেই দম ফেলার ফুসরত। একজন চিকিৎসক সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ করার নিয়ম থাকলেও তাদের ৮০ থেকে ৯০ ঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে।
.
গত রবিবার (১৮ মে) সরজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড়। একজন রোগীর চিকিৎসা সেবা পেতে দীর্ঘক্ষণ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের লাভলী খাতুন (৪০) বলেন, ছেলের পেটের ব্যথায় চিকিৎসা নিতে সকাল ৯ টা থেকে ২ ঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি। রোগীর অনেক চাপ।
.
টিকিট বিক্রয় কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। অন্তবিভাগে ভর্তি থাকেন ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী। অন্তবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কাজীপাড়া গ্রামের মেহেদি হাসান (২০) বলেন, ২দিন থেকে টাইফয়েডের চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্যালাইন ও ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। অন্যান্য ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে।
.
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মুনজুর রহমান বলেন, উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য এই হাসপাতালটির উপর নির্ভরশীল। চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণীর ৩টি পদ ছাড়া বাকিগুলো শূন্য থাকায় তাদের কাজ গুলোও চিকিৎসকদের করতে হয়। তৃতীয় শ্রেণীর পদে রয়েছে বিশাল শূন্যতা। হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। এতে ৫০ জনের ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে ৮০ থেকে ৯৫ জনের চিকিৎসা দিতে হয়। ফলে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকটে পড়তে হয়। হাসপাতালটি এখন ১০০ শয্যায় উন্নীত করা সময়ের দাবি। একটি সেল কাউন্টার থাকলেও রিএজেন্ট সংকটে হেমোটোলজি পরীক্ষা ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় এক্স-রে মেশিনের ফিল্ম সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া চিকিৎসকদের জন্য আবাসিক ভবনগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।
প্রিন্ট