নড়াইলের বড়দিয়া নৌ বন্দরের পাশে এক স্থানে বালুমহল ইজারা নিয়ে অন্য স্থানে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে শত বছরের নদী বন্দর বড়দিয়া মাহাজন বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া নদীর তীর রক্ষায় এখানে জিও ব্যাগ এবং ব্লক স্থাপন করা হলেও তা হুমকির মুখে পড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা গেছে, মা বাবার দোয়া এন্টারপ্রাইজের নামে নবগঙ্গা-মধুমতি নদীর সংযোগস্থলের বড়দিয়া তেলকাড়া মৌজার মধুমতির চর বালুমহলটি গত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৩লাখ ৮০ হাজার টাকায় ১বছরের জন্য ইজারা নেয়।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বালি মহলের নির্দিষ্ট স্থানের বাহিরে গিয়ে বড়দিয়া-মহাজন বাজারের উত্তর পূর্ব পাশের্ব সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭/৮ টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। ইজারাদার বড়দিয়া বাজারের পূর্ব উত্তর পাশের তেলকাড়া গুচ্ছ গ্রামের সামনে ২ হাজার বর্গফুট এলাকার মধ্যে বালু কাটার নিয়মথাকলেও তারা এই সিমানার বাইরে গিয়ে বড়দিয়া মহাজন বাজারের সন্নিকটে এসে বালু কাটছে।
এ বিষয়ে খান আবদুল কায়ুম অভিযোগ করে বলেন, কতিপয় ইজারাদার বড়দিয়া বাজারের উত্তর পাশে অবস্থিত তেলকাড়া গুচ্ছ গ্রাম, সেই গুচ্ছ গ্রামের উত্তর পূর্ব প্রান্তের সামনে থেকে ৭৫০ ফুটের ভীতরে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার কথা থাকলেও তারা তার বাইরে বড়দিয়া মহাজন বাজারের কাছে দিনে ও রাত ১২টার পর থেকে বাজারের একদম সন্নিকটে ৭/৮টা ড্রেজার এনে বালু কাটে।
এতে নদীর পাঁড় ভাঙ্গনের ফলে বাজারসহ এলাকার ঘরবাড়ি বিলীন হতে চলেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে ও কোন ফল হচ্ছেনা। তিনারা যে কর্মকর্তাদের ভাঙ্গন ও বালু কাটার এলাকায় পাঠান, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে চলে যায়। পরে একই ভাবে ইজারাদার অবৈধভাবে বালু কাটে।
বড়দিয়া বাজার বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জগদিস কুমার সরকার বলেন,অনেক পুরানো বড়দিয়া বাজার নদী ভাঙ্গনের কারনে শেষ হয়ে গেছে,যেটুকু আছে সেটা রক্ষার জন্য সরকার কোটি টাকা দিয়ে ব্লক দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এক শ্রেনীর ঠিকাদারদের অত্যাচারের কারনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে এই বাজার রক্ষার প্রচেষ্টা তা নষ্ট হতে চলেছে। কারন উপরের পাশে ব্লক দিয়ে যদি তার নিচে বা কাছে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে এই ব্লক তো ভেঙ্গে পড়বেই। যে কারনে শুধু বাজার ধ্বংস হচ্ছে না সরকার ভাংগন প্রতিরোধে যে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করছে তা পুরোটাই অপব্যয় হচ্ছে।নবগঙ্গা মধুমতি নদীর সংযোগ স্থলে বাড়ি বিকাশ দাস ও বিধান দাস বলেন, বাজারের পাশে চর পড়েছিল যেখানে আমরা দাড়িয়ে নিয়মিত গোসল করতাম কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার ফলে এখানে গভীর হয়েছে। যে কারনে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে ব্লক ও ধসে পড়ছে। তাছাড়া এতে করে জীব বৈচিত্র ভয়ঙ্কর ভাবে হুমকির মুখে।
এই বিষয়ে বড়দিয়ার যুব সমাজের সাথে কথা হলে তাদের মধ্য থেকে মোঃ রাসেল খান (জনি) বলেন বড়দিয়া বাজার আশে পাশের ৫০টি গ্রামের সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি নাম বা একটি রূপ। এখানে ২টি স্কুল ১টি কলেজ মসজিদ,মাদ্রাসা,মঠ,মন্দির আছে। এই বাজারে ৩টি জেলার কয়েক শত ব্যবসায়ী ব্যাবসা বানিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে।
তাই সরকারের কাছে বিনীত দাবী এই বাজারকে রক্ষা করার জন্য সরকার অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর কোনোভাবে ইজারা দেয়া না হয় সে বিষয়ে বড়দিয়া বাসির পাশে থাকবে।
বড়দিয়া মাদ্রাসার সাধারন সম্পাদক খান আজাদ আলী বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্দ না করলে এই মাদ্রাসাসহ বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সরকার একদিকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করছে অন্য দিকে কয়েক লক্ষ টাকায় নদীতে বালু কাটার ইজারা দিচ্ছে। তাতে সরকারেরই ক্ষতি বেশি হচ্ছে।
বড়দিয়া গৌড়ীয় মঠের সার মহারাজ বলেন.বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মঠ হলো বড়দিয়া গৌড়ীয় মঠ। বর্তমানে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারনে নবগঙ্গা মধুমতি নদী ভাংতে ভাংতে প্রায় মঠের ধারে চলেএসেছে। এই মঠকে বাচাতে হলে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খাঁন রাসেল সুইট বলেন,বৈধভাবে ইজারা নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে বালু না উত্তোলন করে অন্যায়ভাবে বালু কাটা হচ্ছে। আমি ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি,তাহারা ব্যবস্থা নিয়ে বালু উত্তোলন ও বন্ধ করেছিলেন,কিন্তু আবার কিভাবে এই অন্যায় কাজ হচ্ছে আমার বোধগম্য নয়। সব সম্ভবের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।