ডলারের মজুত বাড়াতে পর্যটন নীতিতে পরিবর্তন আনছে ভুটান। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে তাদের আবাসন ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নিয়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের এই দেশটির সরকার।
এতদিন ভুটান ভ্রমণে যাওয়া প্রত্যেক বিদেশি পর্যটক, যারা চারদিন থাকলে—তাদেরকে ২০০ ডলার ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি’ (এসডিএফ) দিতে হতো। চারদিন পর প্রতিদিনই বাড়তো এই এসডিএফের পরিমাণ।
সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে যেসব বিদেশি পর্যটক ভুটানে আসবেন, তারা ২০০ ডলার এসডিএফের বিনিময়ে ৪ দিনের পরিবর্তে ৮ দিন থাকতে পারবেন। আর যেসব পর্যটক ১২ দিনের সমপরিমাণ এসডিএফ দেবেন— তারা থাকতে পারবেন পুরো একমাস। আগামী মাস থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভুটানের পর্যটন দপ্তরের প্রধান দরজি ধ্রাধুল বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘পর্যটকরা যদি বেশিদিন আমাদের দেশে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতির জন্য তা খুবই ইতিবাচক হবে।’
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিদেশি পর্যটকদের ভুটানে প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে তুলে নেওয়া হয় এই স্থগিতাদেশ।
দরজি ধ্রাধুল জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৪৭ হাজারেরও বেশি বিদেশি পর্যটক এসেছেন দেশটিতে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ৮৬ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে ভুটানে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬০০ বিদেশি পর্যটক গিয়েছিলেন দেশটিতে।
হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশ অবস্থিত ভুটান বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যুষিত এবং ধর্মপরায়ণ একটি দেশ। মূলত এ কারণে প্রাকৃতিকভাবে খুবই সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও সাধারণভাবে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এর আগে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি ভুটানের সরকার।
ভুটানের সংস্কৃতিতে হিমালয় পর্বতমালার পর্বতগুলোকে খুবই পবিত্র বলে গণ্য করা হয়। তাই যথেষ্ট সংখ্যক উঁচু পর্বত থাকা সত্ত্বেও দেশটিতে কোনো বিদেশি পর্যটকের পর্বতারোহনের অনুমতি নেই। এক্ষেত্রে ভুটান প্রতিবেশী নেপালের থেকে পুরোপুরি ব্যতিক্রম।
তাছাড়া ভুটানের সাধারণ জনগণ ও সরকারের ধারণা— সাধারণ মধ্যবিত্ত পর্যটকরা ভুটানের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটাবে ও শান্তি বিঘ্নিত করবে। এ কারণে দেশটি বরাবরই উচ্চবিত্ত পর্যটকদের আকর্ষণ করতে আগ্রহী।
তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেই নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে ভুটানের সরকার। কারণ, আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে দেশটির ডলারের রিজার্ভ। ভুটানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়্যাল মনিটারি অথরিটির (আরএমএ) বুধবার এক বিবৃতিতে আরএমএ জানিয়েছে, গত ২০২২ সালের জুন মাসে বিদেশি মুদ্রার যে রিজার্ভ ছিল, সে তুলনায় চলতি বছর তা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।
ভুটানের শীর্ষ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল থিম্পু কলেজের অর্থনীতির অধ্যাক্ষ সঞ্জীব মেহতা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ভুটানের জাতীয় অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এটা নিশ্চিতভাবেই গুরুতর একটি পরিস্থিতি। মূলত ৩টি কারণে আজকের এ অবস্থায় পৌঁছেছে ভুটান— প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি, পর্যটন থেকে আয় ও প্রবাসী রেমিটেন্স কমে যাওয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহে মন্দাভাব।’
প্রিন্ট