কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানছে না। ফলে তাদের ঋণ আদায় না হয়ে খেলাপি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এখন থেকে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক কোটি বা এর বেশি অঙ্কের যেকোনো ঋণ বা লিজ বিতরণের আগে গ্রাহকের ওপর নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। এতে ঋণ বিতরণের নিয়মকানুন পালিত হলেই কেবল তা ছাড় করা যাবে। অন্যথায় ঋণের অর্থ ছাড় করা যাবে না।
এ বিষয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সার্কুলারে বলা হয়, অনিয়ম রোধ ও নিয়মনীতির মধ্যে এনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। ঋণ বা লিজ বিতরণের আগে প্রচলিত নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এক কোটি বা এর বেশি যেকোনো অঙ্কের ঋণ বিতরণের আগে গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানের ওপর একটি অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। একই সঙ্গে তা নথিতে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে নিয়মকানুন পালিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হলেই কেবল অর্থ ছাড় করা যাবে। নিয়মকানুন পালিত না হলে অর্থ ছাড় করা যাবে না।
পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত ছাড়া কোনো ঋণ বিতরণ করা যাবে না। বড় অঙ্কের ঋণসীমা মেনে চলতে হবে। ঋণের গুণগত মান ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ বিতরণের নিয়মাচার নিবিড়ভাবে তদারকি করতে ড্যাশবোর্ড স্থাপন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ পরিপালন বিভাগের প্রধানকে নিয়মিত ড্যাশবোর্ড তদারকি করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, সহায়ক জামানত গৃহীত হয়নি একক গ্রাহকের অনুকূলে প্রদেয় সর্বোচ্চ ঋণ সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে, ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি, ঋণের নিয়মকানুনের নীতিমালা পালিত হয়নি-এ ধরনের ঋণের তথ্য প্রত্যেক মাস শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। ঋণ বিতরণের আগে নিরীক্ষায় কোনো গুরুতর অনিয়ম পেলে ঋণ শৃঙ্খলাবিরোধী বা ভবিষ্যতে ঋণ আদায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এমন ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠির অনুলিপি অডিট কমিটির প্রধান ও পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় ত্রুটিবিচ্যুতিসহ উপস্থাপন করতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিতরণ করা ঋণ যথাযথভাবে আদায় না হওয়ায় তারল্য প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পালন না করে জামানতবিহীন ও পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত ছাড়া ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ করা ঋণের সদ্ব্যবহার না করার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের জালজালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পিকে হালদারই পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। জালিয়াতির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় এগুলোতে তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে। খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। গ্রাহকদের আস্থায় চিড় ধরায় আমানত প্রবাহও কমে গেছে। যে কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আমানতের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।
প্রিন্ট