স্বাধীনতার পাঁচ দশকেও ফরিদপুর শহরে রয়ে গেলে ‘পাকিস্তান’। আলীপুর এলাকার একটি মহল্লার নাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে এখনও ‘পাকিস্তান পাড়া’ লেখা আছে, যদিও বছর চারেক আগে এলাকার নাম পাল্টে দিয়েছে পৌরসভা।
পৌর শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মুজিব সড়কের পশ্চিম পাশে কুমার নদের পাড়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনের এলাকা এটি।
বছর চারেক আগে পৌর কর্তৃপক্ষ মহল্লার নাম ঠিক করেছে ‘শাপলা সড়ক’। তবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নতুন লেখা সাইনবোর্ডেও ‘পাকিস্তান পাড়া’ উল্লেখ করা আছে।
জননী এক্সপ্রেস, ইউএসবি কুরিয়ার সার্ভিস, এসআর পার্সেল সার্ভিসেস, একটি মুদি দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কাজ করেছে।
এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সামছুল আরিফিন সাগর সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, “চার বছর আগে পৌরসভার সিদ্ধান্তে মহল্লার নাম পরিবর্তন করা হয়। তার পরে অনেকেই আগের নাম ব্যবহার করছে। নতুন ভাড়াটিয়ারা যারা এসেছে, তারাও আগের নাম ব্যবহার করছে। এটা ঠিক করেনি।”
তিনি বলেন, “নাম পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন সময়ে নোটিশ, মাইকিং করেছি। তার পরেও এখনও যদি কেউ আগের নাম ব্যবহার করে তবে অবশ্যই সেটি অন্যায় হবে।”
সাইনবোর্ডে ‘পাকিস্তান পাড়া’ নাম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে জননী এক্সপ্রেস সার্ভিসের শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, “যখন আমরা অফিস স্থাপন করি তখন এলাকাবাসীর কাছে মহল্লার পরিচিতির নাম জানতে চাই। তারা জানায়, এলাকার নাম ‘পাকিস্তান পাড়া’। এ কারণে আমরা নামটি ব্যবহার করেছি। যদিও এটি সঠিক কাজ হয়নি। আমরা সাইনবোর্ড পরিবর্তনের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
এলাকার মুদি দোকানি রাশেদ হোসেন বলেন, “এলাকাটি এই নামেই আগে পরিচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আলোচনা উঠেছে, আমরা দ্রুতই সাইনবোর্ড পাল্টে দেব।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, “পাকিস্তান নাম ব্যবহার করার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। যারা বা যিনি এলাকাটির নাম এখনও ‘পাকিস্তান পাড়া’ বলতে চেষ্টা করে, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।”
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ বলেন, “এই ধৃষ্টতা যারা দেখিয়েছেন, তাদেরকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা যাবে না।”
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস এ প্রসঙ্গে সময়ের প্রত্যাশাকে বলেন, “যারা এই কাজটি করেছে, অবশ্যই তারা অন্যায় করেছে। নাম যে পাল্টেছে সেটা হয়ত তারা জানে না। তবে আমরা আবার নোটিশ দিয়ে সাইন বোর্ডগুলো পরিবর্তন করার আদেশ দেব।”
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “বিষয়টি গুরুতর। তদন্ত সাপেক্ষে সাইনবোর্ডগুলো অপসারণ করা হবে। কেন প্রতিষ্ঠানগুলো এমনটি করল তার কৈফিয়তও চাওয়া হবে।”