ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বেলা ১১টায় গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সরকারপ্রধানকে।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা ছাড়াও নানা পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুরুতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের নির্দিষ্ট সংখ্যক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর একে একে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্মকর্তা, প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া আলোচনা সভা, র্যালি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়।
শুভেচ্ছার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ যাতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু। যারা ভোট চোর, ভোট ডাকাত ছিল তারাই এখন গণতন্ত্র চায়! ভোটের অধিকারের কথা বলে! যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে, তাদের কাছ থেকে এসব কথা শুনতে হয়। তিনি বলেন, আমরা জনতার সঙ্গে থাকব। জনতার পাশে থাকব। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করব। জনগণের জন্য কাজ করে যাব। জণগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা ক্ষমতায় এসেছি। মানুষের বিশ্বাস ও আস্থাটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু- এটা মনে রাখতে হবে। এটা মাথায় রেখেই ওই সন্ত্রাসীর দল, খুনির দল বা যুদ্ধাপরাধীর দল এরা যেন দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাই।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, বাকিগুলো লুটেরার দল। তারা এ দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে না। বাংলাদেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও কার্যকর করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও কল্যাণ করাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, লক্ষ্য একটাই- দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করা, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সে হাসি ফোটানোটাই একমাত্র কর্তব্য এবং সেটা করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আজকে যখন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দিই, ঘর পাওয়ার পর তার মুখের হাসির চেয়ে বড় পাওয়া বা স্বার্থকতা আর কিছু নেই। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র, এটা নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার কবে ছিল? পঁচাত্তর সালের পর থেকে জিয়াউর রহমান ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা করেছে। বরং আওয়ামী লীগের নানা পদক্ষেপের ফলে আজকে বিভিন্ন সংস্কার করে করে নির্বাচন প্রদ্ধতিটাকে গণমুখী করা, জনগণের ভোট সম্পর্কে তাদের সচেতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করা হয়েছে, যেখানে ভুয়া ভোটার দিয়ে তালিকা হতো, সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা হয়েছে, আইডি কার্ড- সবই তো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। তারপরও যখন কেউ ভোট, গণতন্ত্র আর নির্বাচন নিয়ে আমাদের ছবক দিতে আসে, সেখানে আর কিছু বলার নেই। সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করা, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন কর্মসূচি যেন ত্বরান্বিত হয় সে ব্যবস্থাটা নিতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাবে। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার যে স্বপ্ন- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা, সেটা আমরা ইনশাআল্লাহ করব।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেদিন ফিরে আসি সেদিন তো চেনা মুখগুলো পাইনি। কিন্তু পেয়েছিলাম এ দেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। সেই থেকে বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। আমি সেভাবেই নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আজকে আমি এটাই বলব, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ প্রতিজ্ঞা নিয়েই চলতে হবে। ধন-সম্পদ কারও চিরদিন থাকে না। মরলে মাটির নিচেই যেতে হবে, কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়। সেটা যেন না হয়। কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। কারণ এটাই (আওয়ামী লীগ) একমাত্র দল যারা দেশের কল্যাণে চিন্ত-ভাবনা করে। আর বাকিগুলো তো লুটেরার দল। তারা কোনো দিন জনগণের কল্যাণে কাজ করে না।
প্রিন্ট