রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ ঘাটচেক এলাকার কর্ণফুলী নদীর পাড়জুড়ে স্থাপন হতে যাচ্ছে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখান থেকে উৎপাদিত হবে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আগামী জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে আশা ব্যক্ত করছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিপিডিবির বোর্ড সভায় রাঙ্গুনিয়ায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেন্দ্র দুটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে (অন গ্রিড) গিয়ে যুক্ত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিপিডিবির সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের দিকে রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ ঘাটচেক এলাকায় ৬০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব মেটিটো ইউটিলিটিজ লিমিটেড এই কাজটি করার প্রক্রিয়া করেছিলো। ৫ দশমিক ৯৮ টাকা প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা দরে এখান থেকে ২০ বছর মেয়াদ পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে প্রকল্প ব্যয়ের হিসেব করে উদ্যোগটি থেকে পিছু হটে দুবাইভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটি। এরপর অনিশ্চয়তায় পড়ে প্রকল্পটি।
তবে দেশব্যাপী জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ সংকটের পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে উদ্যোগটি। বর্তমানে বিপিডিবির ১৮৮ একর অধিগ্রহণকৃত জমিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে এক বছর। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫৫০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ৯০ হাজার ৯০০টি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার উপযোগী করতে ১০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৫০০টি ইনভার্টার স্থাপন করা হবে। এখানে প্রতিদিন ২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রকল্ল ব্যয় এখনো চূড়ান্ত না হলেও ৪০০ কোটি টাকার বেশি নিট ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে ভূমির উন্নয়ন, সড়ক, ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ও যুক্ত হবে। রাঙ্গুনিয়ার প্রকল্পের দরপত্রের সঙ্গে কাপ্তাইয়ে ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রও আহ্বান করেছে বিপিডিবি।
বিপিডিবি’র নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিদপ্তরের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) আহমেদ জহির খান গণমাধ্যমকে বলেন, ডিটেইলড প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) প্রণয়নের আগেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যেন দ্রুত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করা যায়। এখনো প্রকল্প ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে বিপিডিবি কর্তৃপক্ষ জুন মাস থেকেই উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণে একটি জটিলতা থেকে গেছে। এই ব্যাপারে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিপিডিবি ২০১৩–১৪ সালের দিকে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের লক্ষে ১৮৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করে। এরমধ্যে পারুয়া মৌজার ১০০ একর এবং ঘাটচেক মৌজার অধিনে ৮৮ একর ভূমি রয়েছে। অধিগ্রহণকালে ঘাটচেক মৌজার দাম (প্রতি শতক) ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা ছিল।
এর উপর মৌজা দাম থেকে সরকারি নিয়ম অনুসারে ৫০ ভাগ বৃদ্ধি দামে ক্রয় করে এসব ভূমি। তবে পারুয়া মৌজার প্রতি শতক ভূমির মূল্য ৩৭ হাজার টাকা দাম থাকলেও অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষ ভুলবশত মৌজা দাম মাত্র ১৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। পাশাপাশি দুটি ভূমির মৌজা দামে পার্থক্যের কারণে ঘাটচেক মৌজার ভূমি মালিকরা প্রতি শতক ভূমি যেখানে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা করে পেয়েছে, সেখানে পারুয়া মৌজার ভূমি মালিকরা পাবেন ২৮ হাজার ৫০০ টাকা করে। সেজন্য ঘাটচেক মৌজার ভূমি মালিকরা নিজেদের ভূমির দাম নিয়ে জায়গা হস্তান্তর করলেও পারুয়া মৌজার অন্তত দুই শতাধিক ভূমি মালিক ভূমি হস্তান্তর করেননি এবং টাকাও নেননি। তারা তখন থেকেই দাম বৈষম্য রোধে নানা আন্দোলন করে আসছে।
কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম আরও বলেন, আমি নিজেও ওই ভূমি মালিকদের একজন। তাই সকলের পক্ষে এই দাম বৈষম্য রোধে উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। যেটি এখনো চলমান রয়েছে। এই বৈষম্য রোধ না হলে আমরা ভূমি হস্তান্তর করব না। প্রয়োজনে আরও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এই ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের বিষয়ে জেনেছি। এটি নিয়ে স্থানীয় পারুয়া মৌজার ভূমি মালিকদের একটি অভিযোগ রয়েছে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।