মধ্যরাতে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে এমন অভিযোগে স্বামীও শ্বশুর শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে। রবিবার(১৪)মার্চ বিকালে নির্যাতিত গৃহবধু এশা’র বাবা ইমাম হোসেন বাদী হয়ে স্বামী সজিব মোস্তারী, শ্বশুর নজরুল ইসলাম বিশ্বাস ও শ্বাশুড়ী স্বপ্না বিশ্বাস এর নামে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে নিজের চুল নিজে কেটে স্বামীকে ফাসাতে নাটক বলেছেন শ্বশুর বাড়ির লোকেরা,তাদের কাছে ঐ রাতের অডিও ভিডিও প্রমান
আছে বলে দাবী তাদের।
পুলিশ জানায়, দক্ষিন নড়াইলের ইমাম হোসেনের মাধ্যমে মেয়ের নির্যাতনের খবর শুনে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে শ্বশুর বাড়ি শহরের দূর্গাপুর বাড়ি থেকে এশা কে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি দক্ষিন নড়াইলে নিয়ে যায়। পরে শনিবার বিকালে নির্যাতনের অভিযোগে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এশাকে।
নির্যাতিত নারীর পরিবারের অভিযোগ, দুর্গাপুর মহিলা কলেজ এলাকার নজরুল বিশ্বাসের ছেলে অট্রিয়া প্রবাসী সজিব মুস্তারি সাড়ে চার বছর আগে শহরের দক্ষিন নড়াইল এলাকার হোসেইন ইমাম তৈমুরের মেয়ে জান্নাত আরা সেতুকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করে।
বিয়ের পরে কিছু দিন না যেতেই সেতু তার স্বামী সজিবের মাদকাসক্তি ও পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় জানতে পারে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই সেতুর উপর নির্যাতন শুরু হয়। এ অবস্থার মাঝে গত সাড়ে চার বছরের দাম্পত্য জীবনে সেতু দুই সন্তানের মা হলেও তার উপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। স্বামী সজিব দেশে আসলে তার অপকর্মের ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই তাকে নির্যাতন ভোগ করতে হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার গভীর রাতে সজিব তার বাবা মার সহায়তায় সেতুকে বেদম মারপিটের এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জোর করে চেতনানাশক খাওয়ায়। এসময় সেতু জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার মাথার চুল, ভুরু কেটে দেয়া হয়।
নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেতু বলেন, আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। চুল এবং ভুরু কেটে দেওয়া হয়েছে। জোর করে এক সঙ্গে অনেকগুলি ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেয়া হয়।
এশা’র মা স্বপ্না বিশ্বাসের অভিযোগ, সজিব মুস্তারি ও তার পরিবারের লোকজন শুক্রবার গভীর রাতে তারা আমার মেয়ে জান্নাত আরা সেতুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। পুলিশের সহাতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।নির্যাতিতা নারীর স্বামী সজীব মুস্তারীর পরিবারের অভিযোগ, সজিব অষ্ট্রিয়া থেকে নভেম্বর মাসে নড়াইলের বাড়ীতে ছুটিতে আসে।
এর পর থেকে এশা সময়ে অসময়ে বিভিন্ন বাহানা করে, কখন ফ্লাটের,আবার কখনো এশার বাবার ১০-১২লক্ষ টাকার দায় দেনার টাকা পরিশোধ করার। এসব না মেনে নেয়ায় আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কয়েকবার হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার নাটক ও করেছে,রাস্তায় এসে চলন্ত গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
স্বামী সহ পরিবারকে ফাঁসাতে নানান ভাবে পরিকল্পনা করে এশা। আইনের আশ্রয় নিতে গত ০৭ ফেব্রুয়ারী নড়াইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করে। থানায় অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে এশা ১২ই ফ্রেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় স্বামী সজিব সহ পরিবারের সকলকে হুমকি দিয়ে বলে এই চারতলা বাড়ী আমার নামে লিখে দিতে হবে না হলে তোর পরিবারের সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবো।
সজীব মুস্তারীর ছোট ভাই মির্জা গালিব সতেজ বলেন, আমার ভাবি আমাদের সম্পত্তির লোভে নিজের মাথার নিজে চুল কেটে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমরা নাকি উনাকে
নির্যাতন করছি । রাতে ভাবি বাথরুমে ঢুকে চুল কেটে আমাদের সামনে আসে তখন চুল কাটার কথা জিজ্ঞাসা করলে এশা বলে চুল কাটছি ভালো করছি মন চাইলে গায়ে গরম পানিও ঢালবো।
নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.মশিউর রহমান বাবু বলেন,তার শরীরে তেমন কোন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি,তবে চুল নিজে কেটেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। তার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নির্যাতনের বিবরন দেয়া যাবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ইলিয়াস হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।