ঢাকা , সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সালথায় পাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট ও সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর দ্রুতই আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে বাংলাদেশঃ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হলো বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত শপথ বাঘায় উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন খোকসায় যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত র‍্যাব আটকের পর নারীর মৃত্যু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে ‌ সেহরি ও ইফতার বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত ফরিদপুরে মহান “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন'” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পাবনার চাটমোহরের করকোলা ঋষি পল্লীর শতভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে লেখাপড়ায়

-প্রতীকী ছবি।

গত অর্ধ শতাব্দীতে পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা ঋষি পল্লীর কোন ছেলে বা মেয়ে সরকার যখন উপবৃত্তি দিচ্ছে, বিনামূল্যে বই দিচ্ছে এমন সময়েও এসএসসি পাশ করতে পারেনি। এ পল্লীতে পড়াশুনায় ঝরে পরার হার শতভাগ। ফলে দিনের পর দিন এ ঋষি পল্লীর মানুষগুলো অনগ্রসর রয়ে যাচ্ছে। চাটমোহর পৌর সদর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে করকোলা গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামের পূর্বাংশে ঋষি পল্লীটি অবস্থিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুসলমানদের পাশাপাশি সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে এ গ্রামে বর্তমান ঋষি সম্প্রদায়ের ১শ ৫ পরিবার বসবাস করছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য গত ৫০ বছরে লেখা পড়ায় অনগ্রসর এ ঋষি পল্লীর কেউই এস এস সি পাশ করতে পারে নি। এ পল্লীর ক্ষিতিস চন্দ্র দাস (৭১) সর্ব শেষ ১৯৭০ সালে এস এস সি পাশ করেন। ক্ষিতিশ দাস জানান,“ বৃটিশ আমল থেকে এ গ্রামে ঋষিদের বসবাস।

এখন প্রায় সব শিশুই স্কুলে যায়। ফাইভ, সিক্স, সেভেন এসব ক্লাসে পড়ার সময় বিভিন্ন কারণে ঝরে পরছে তারা। বারো তেরো বছর বয়সে এসে কিশোররা লেখা পড়া বাদ দিয়ে সেলুনের কাজ, জুতার কাজ, বেতের কাজ, দর্জির কাজসহ এরুপ অন্যান্য কাজে যুক্ত হচ্ছে। মেয়েরা মায়েদের সাথে বাশের কুটির শিল্পের কাজ করছে।অভিভাবকরা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। মূলত অভিভাবকদের অসচেতনতা ও অর্থের অভাবে তারা আর পড়ালেখা করছে না। বর্তমান এ পল্লীতে ৬০ থেকে ৭০ জন স্কুল গমনোপযোগি ছেলে মেয়ে রয়েছে। এরা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্দির ভিত্তিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও পাশের স্কুল গুলোতে পড়া লেখা করে।

অত্যন্ত ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা করকোলা ঋষি পল্লী। ৬ বিঘার মতো জমিতে ১শ ৫ পরিবার গাদা গাদি করে বসবাস করছে কোন মতে। কেউ এক শতক কেউ দুই শতক এরকম পরিমান জায়গার উপর বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। মাঠে কারো কোন জমা জমি নাই। জমি চাষ করেন না কেউই। কয়েক বছর পূর্বে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঋষি পল্লীর জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করে দিয়েছেন। এখন কমিউনিটির মিটিং হয় এ সেন্টারে। কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই অবস্থিত দক্ষিনেশ^র কালী মন্দির। এখানেই কালী পূজা, দূর্গা পূজা, মহাদেব পূজা, স্বরস্বতী পূজাসহ অন্যান্য পূজা অর্চণার আয়োজন করেন ঋষি পল্লীর নারী পুরুষরা।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এ ব্যাপারে উক্ত এলাকার প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, স্কুল পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঝরে পরা রোধ কল্পে প্রয়োজনে অতিরিক্ত হোম ভিজিট, অভিভাবক সমাবেশ এবং অভিভাবকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থী ঝরে পরা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, “উপজেলার মধ্যকার একটি ঋষি পল্লী শিক্ষায় এতটা পিছিয়ে রয়েছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে অতিরিক্ত নজরদারী করা হবে।

Tag :

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

সালথায় পাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা

error: Content is protected !!

পাবনার চাটমোহরের করকোলা ঋষি পল্লীর শতভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে লেখাপড়ায়

আপডেট টাইম : ০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১

গত অর্ধ শতাব্দীতে পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের করকোলা ঋষি পল্লীর কোন ছেলে বা মেয়ে সরকার যখন উপবৃত্তি দিচ্ছে, বিনামূল্যে বই দিচ্ছে এমন সময়েও এসএসসি পাশ করতে পারেনি। এ পল্লীতে পড়াশুনায় ঝরে পরার হার শতভাগ। ফলে দিনের পর দিন এ ঋষি পল্লীর মানুষগুলো অনগ্রসর রয়ে যাচ্ছে। চাটমোহর পৌর সদর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে করকোলা গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামের পূর্বাংশে ঋষি পল্লীটি অবস্থিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুসলমানদের পাশাপাশি সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে এ গ্রামে বর্তমান ঋষি সম্প্রদায়ের ১শ ৫ পরিবার বসবাস করছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য গত ৫০ বছরে লেখা পড়ায় অনগ্রসর এ ঋষি পল্লীর কেউই এস এস সি পাশ করতে পারে নি। এ পল্লীর ক্ষিতিস চন্দ্র দাস (৭১) সর্ব শেষ ১৯৭০ সালে এস এস সি পাশ করেন। ক্ষিতিশ দাস জানান,“ বৃটিশ আমল থেকে এ গ্রামে ঋষিদের বসবাস।

এখন প্রায় সব শিশুই স্কুলে যায়। ফাইভ, সিক্স, সেভেন এসব ক্লাসে পড়ার সময় বিভিন্ন কারণে ঝরে পরছে তারা। বারো তেরো বছর বয়সে এসে কিশোররা লেখা পড়া বাদ দিয়ে সেলুনের কাজ, জুতার কাজ, বেতের কাজ, দর্জির কাজসহ এরুপ অন্যান্য কাজে যুক্ত হচ্ছে। মেয়েরা মায়েদের সাথে বাশের কুটির শিল্পের কাজ করছে।অভিভাবকরা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। মূলত অভিভাবকদের অসচেতনতা ও অর্থের অভাবে তারা আর পড়ালেখা করছে না। বর্তমান এ পল্লীতে ৬০ থেকে ৭০ জন স্কুল গমনোপযোগি ছেলে মেয়ে রয়েছে। এরা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্দির ভিত্তিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও পাশের স্কুল গুলোতে পড়া লেখা করে।

অত্যন্ত ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা করকোলা ঋষি পল্লী। ৬ বিঘার মতো জমিতে ১শ ৫ পরিবার গাদা গাদি করে বসবাস করছে কোন মতে। কেউ এক শতক কেউ দুই শতক এরকম পরিমান জায়গার উপর বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। মাঠে কারো কোন জমা জমি নাই। জমি চাষ করেন না কেউই। কয়েক বছর পূর্বে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঋষি পল্লীর জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করে দিয়েছেন। এখন কমিউনিটির মিটিং হয় এ সেন্টারে। কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই অবস্থিত দক্ষিনেশ^র কালী মন্দির। এখানেই কালী পূজা, দূর্গা পূজা, মহাদেব পূজা, স্বরস্বতী পূজাসহ অন্যান্য পূজা অর্চণার আয়োজন করেন ঋষি পল্লীর নারী পুরুষরা।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এ ব্যাপারে উক্ত এলাকার প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, স্কুল পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঝরে পরা রোধ কল্পে প্রয়োজনে অতিরিক্ত হোম ভিজিট, অভিভাবক সমাবেশ এবং অভিভাবকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থী ঝরে পরা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, “উপজেলার মধ্যকার একটি ঋষি পল্লী শিক্ষায় এতটা পিছিয়ে রয়েছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে অতিরিক্ত নজরদারী করা হবে।