প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হবে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলার এবং বাকি অর্থ দেওয়া হচ্ছে ৪টি পৃথক প্রকল্পের বিপরীতে। প্রকল্পগুলো অবশ্য আগেই অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ। বাজেট সহায়তার অর্থ সবুজ এবং জলবায়ু প্রতিকূলতা প্রতিরোধ উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়াশিংটন সময় আগামীকাল সোমবার বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে বিশেষ এ আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির প্রথম পর্যায়ের অনুষ্ঠান গত জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন) অ্যাক্সেল ফন ট্রটসেনবার্গ ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পের মধ্য রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবহন ও বাণিজ্য বাড়ানো (প্রথম পর্যায়) । প্রকল্পটিতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অভিযোজন এবং ঝুঁকি কমাতে সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ (আরআইভিইআর) প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ৫০ কোটি ডলার। টেকসই ক্ষুদ্রশিল্প প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার। এছাড়া পরিবেশগত স্থায়িত্বশীলতা এবং রূপান্তর প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের ৩টি প্রকল্পে ১২৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৭ সাল পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদে বাংলাদেশকে কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (সিপিএফ) অধীনে ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সিপিএফের আওতায় প্রতি বছর ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আছে বিশ্বব্যাংকের। সে হিসেবে চার বছরে মোট ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা আশা করছে বাংলাদেশ।
ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের আগেই বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এলডিসি হিসেবে এখন নমনীয় সুদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরণের পর এ সুবিধা আর থাকবে না। তখন ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিগত ৫০ বছরের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এতে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা নিয়ে বিশ্বব্যাংক সদরদপ্তরে একটি চিত্র প্রদর্শনীও রয়েছে কর্মসূচিতে।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সে সময়কার প্রেসিডেন্ট এম সি নামারার সঙ্গে ঢাকায় প্রথম বৈঠক হয়। ওই বছরের আগস্টেই সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ। এর দুই মাস পর অক্টোবরে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পসহ চারটি প্রকল্পে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম শুরু হয়। ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ওই ঋণ অবশ্য স্বাধীনতার আগেই অনুমোদন দেওয়া ছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে ১৯৭২ সালের ৩০ নভেম্বর ৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে এ অর্থ কাজে লাগানো হয়। বর্তমানে ৫৭টি চলমান প্রকল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের।
প্রিন্ট