কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দূরপ্রাচ্যে অবস্থান হলেও পশ্চিমা ধারার গণতন্ত্রের জন্য অনেকে জাপানকে পশ্চিমা দেশ বলে। আবার অনেকে জাপানকে ‘পশ্চিমঘেঁষা’ বলেও অভিহিত করে। তাই পশ্চিমা বা পশ্চিমঘেঁষা জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কৌশলগত মাত্রায় উন্নীত হলে তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্পর্কে জোরালো বার্তা যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ১০ জানুয়ারি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় বা কৌশলগত অংশীদারিতে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলেন।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আগামীর রূপরেখা প্রণয়নকল্পে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য-প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনযোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুনভাবে সহযোগিতা স্থাপনের মধ্য দিয়ে দুই দেশেই লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিতে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইয়ামাদা কেনজি ও জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়।
বিমানবন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রাসহকারে প্রধানমন্ত্রীকে আকাসাকা প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী টোকিওর এই প্রাসাদেই অবস্থান করবেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আজ জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দেশের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠক শেষে কৃষি, মেট্রো রেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্কসংক্রান্ত বিষয়, মেধাস্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে আটটি সহযোগিতা চুক্তি বা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চার জাপানি নাগরিককে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বৃহস্পতিবার টোকিওতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং জেট্রোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে’ প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া তিনি জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ও কমিউনিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, জাইকা, জেইটিআরও, জেইইআইসি, জেবিপিএফএল, জেবিসিসিইসির শীর্ষ প্রতিনিধিরা বৈঠক করবেন। জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী আকি আবে ও জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী টোকিও থেকে আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবেন। তিনি আগামী ১ মে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ মে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেকে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফর শেষ আগামী ৯ মে ঢাকায় পৌঁছবেন।
প্রিন্ট