২৫ বছর ধরে আলফাডাঙ্গা সদর বাজারে মানুষের জুতা সেলাই-পলিশের কাজ করছি। বছরে দুইটি ঈদে এসব দোকানে আমাদের কাজ থাকে বেশি। রোজ ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো। আমরা সেই আশায় ছিলাম অথচ এবছর হয়েছে তার উল্টো। কয়েক দিন পরে রমজানের ঈদ। এসময় কাজের সিরিয়াল নিয়ে যখন খদ্দেরের সাথে আমাদের বাকবিতান্ডা হয়; এখন সেই খদ্দেরের আশায় পথ চেয়ে থাকতে হচ্ছে। এখন রোজ ৩০০-৪০০ টাকা আয় হচ্ছে।
এ ব্যবসার টাকা দিয়ে দুই ছেলের পড়ার খরচসহ ছয় সদস্য পরিবারের সংসারের সমস্থ কিছু কিনে খেতে হয়।‘২৫ বছরের এ কাজের বয়সে কখনো এমন টা হয়নি’। কথা গুলো বললেল ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা সদর বাজারের ঋষি লিটন অধিকারী। শুধু লিটন অধিকারী নয় আলফাডাঙ্গা বাজারের ঋষি সংকর দাশ, গবিন্দ দাশ, শ্রীবাস দাশ, নিলিখ দাশ, বিষ্ণু দাশ, সেন্টু অধিকারী ও স্বপন দাশসহ অনেক ঋষির এখন কাজের আশায় বসে থাকতে হচ্ছযে
সংকর দাশের বসতবাড়ির জমি ছাড়া তাদের ফসলি কোনো জমি নেই। এ ব্যবসার ওপর ভর করে চলে সাত সদস্য পরিবারের সংসার। বড় হতাশা নিয়ে বলেন এ বছর ঈদে অনেক আশায় ছিলাম ভালো টাকা আয় হবে। কি বলবো বেলা ১১ টা বেজে গেছে এখন মাত্র ৫০-৬০ টাকা আয় হয়েছে।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাজারসহ উপজেলার অন্য বাজারে এক সময় অনেক ঋষি ছিল, মানুষের জুতা, সেন্ডেল সেলাই-পলিশসহ নানান কাজ করে থাকে। এ পেশায় সমাজে সম্মান কম থাকায় অনেকেই পেশা বদল করে চলে গেছে ভিন্ন পেশায়। এখন যাহা রয়েছে তারা বাপ দাদার ব্যবসাকে ধরে রেখেছেন। ইচ্ছে থাকলেও এ পেশা ছাড়তে পারছে না।
এদের মধ্যে অনেকের ছেলে স্কুলে-কলেজে পড়ালেখা করে। বাবাকে এ কাজে সময় দিতে চায়না। ঋষিরাও চায় না তাদের সন্তানেরা এ পেশায় যুক্ত হোক।যুগ যুগ ধরে এসব ঋষিরা আলফাডাঙ্গা বাজারে জুতা সেলাই-পলিশের কাজ করছেন। তাদের বসবাস আলফাডাঙ্গা উপজেলা সীমানা সংলগ্ন বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামে ঋষীপাড়ায়।
জুতা সেলাই-পালিশের পাশাপাশি তারা বাঁশ দিয়ে হাত পাখা, কুলা-ডালা চালনা সহ সংসারের নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন। এসব পণ্যর পরশা সাজিয়ে বসে থাকলেও ঈদের বাজারে এসব জিনিসপত্র বেচাবিক্রি তেমন নেই।
আলফাডাঙ্গা বাজার বণিক সমিতির আহবায়ক পাদুকা ব্যবসায়ী নজির মিয়া বলেন, মানুষের এখন ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। ঈদে নতুন জুতা-সেন্ডেলক্রয় করতে দোকানে ভিড় করছে। সে জন্য ঋষিদের হাতে কাজ একটু কম। তবে আশা করি তাদের খদ্দের আবার আগের মতো বৃদ্ধি পাবে।
|
৮ নং শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ জানান, পরিষদের পক্ষ থেকে ঈদের সময় সব ঋষীকে চাল দেওয়া হবে।এ ছাড়াও পূজার সময় এদের সবাইকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করা হয়ে থাকে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক জানান, তাদের জন্য আলাদা করে সহযোগীতা করার সুযোগ নেই। তারা যে ইউনিয়নের বাসিন্দা, তারা সেই ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সহযোগীতা পাবেন। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে ঋষিদের সাহায্যর ব্যাপারে সুপারিশ করবে।
প্রিন্ট