ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বঙ্গবাজার ট্রাজেডি

জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে দোকানে কাপড় তুলেছিলেন মাগুরার মহম্মদপুরের দবির হোসেন

কষ্টে দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের

গত দুই বছরের করোনার কারণে ব্যবসা ভাল হয়নি। প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ঢাকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী দবির হোসেন। এবারের ঈদে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধারদেনা করে নিজের দু’টি দোকানে অনেক কাপড় তুলেছিলেন। কিন্ত গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ওই বাজারে ভয়বহ অগ্নিকান্ডে তার স্বপ্ন মিশে যায় আগুনের ধোয়ায়। ওই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজারের প্রায় চার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার মধ্যে দবির হোসেনের ছিল দুটি দোকান। যার সবটুকু ছাই হয়েছে আগুনে পুড়ে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সেখানে নতুন করে ব্যবসা সাজাতে ঢাকায় থেকে দবির হোসেন প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘুল্লিয়ায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন দবিরের ৬ সদস্যের পরিবার।

৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর কমপ্লেক্স বঙ্গবাজার কাপড়ের মার্কেটে ভয়বহ অগ্নিকান্ডে তিন হাজারের অধিক কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা দোকান ভষ্মিভূত হয়। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এক ব্যবসায়ীর বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামে। তার নাম দবির হোসন। তিনি ২০ বছরের অধিক সময়ধরে বঙ্গবাজারে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। বিগত দুই বছরের করোনা ও রাশিয়া এবং ইউক্রেণ যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্যদের মত দবিরের ব্যবসাও ভাল যায়নি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গ্রামে এসে ৪৫ শতাংশ জমি বিক্রি এবং বিদেশগামী বোন জামাইয়ের যাত্রা পিছিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে এবারের ঈদে ভরপুর পোষাক তুলেছিলেন নিজের দুটি দোকানে। কিন্তু ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে তিনি সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছেন। কি করে আবার সেখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন তাও তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী দবির হোসেনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায় তাদের দু:খে ভরা গল্প কথা। স্ত্রী, মা ও চার সন্তানসহ ৭ সদস্যের পরিবার দবির হোসেনের। তবে তার বাড়িতে আসার সুযোগ খুব কম হয়। তার স্ত্রী সাফিয়া পারভীন পরম যত্নে সংসার পরিচালনা করেন। স্বামীর ব্যবসার পাশাপাশি তিনি শেলাই মেশিনে কাজ করেন। কারন, স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে সংসার ঠিকমত চলে না।

মা জোহরা বেগম বয়সের ভারে আক্রান্ত এবং অসুস্থ্য হয়ে শয্যাশায়ী, বড় মেয়ে মরিয়ম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, মেজো মেয়ে সায়েমা ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী, ছোট মেয়ে মারিয়া মাদ্রায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া-লোখা করে। ছোট ছেলে সোয়াদের বয়স কেবল পাচ বছর। দবিরের পাঠানো টাকা এবং শেলাই মেশিণে উপার্জিত অর্থ দিয়েই খুব হিসাব করে সংসার পরিচালনা করতে হয় স্ত্রী সাফিয়া পারভীন কে। তবে এবারের ঈদ তাদের কেমন কাটবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ছেলে মেয়েদের জন্য ঢাাকা থেকে এবার নতুন পোষাক আসার কোন সুযোগ নেই। সেটাও তারা মেনে নিতে পারবে বলে জানান মেয়েরা। কিন্তু ঢাকা থেকে টাকা না পাঠালে সংসার চলবে কিভাবে তা নিয়ে দুশ্চিনায় আছেন মা সাফিয়া পারভীন।

বড় মেয়ে মরিয়মের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কেঁদে ফেলেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। আমাদের আব্বু সুস্থ আছেন এর জন্য আমি মহান আল্লার দরবারে শুকরিয়া জানায়। আল্লাহ সহায় হলে আমার আব্বু আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। মা সাফিয়া খাতুন বলেন, যতই কষ্টো হোক দু:সময়ে আমার সন্তানদের আমাকেই ভাল রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ দবির হোসেন বলেন, তার দু’টি দোকান পুড়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে সরকারে সহযোগিতা ছাড়া হবে না। তবে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতায় নিশ্চই আমরা উঠে দাড়াবো।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে ঈদের আগেই সহযোগিতা করা হবে।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

বঙ্গবাজার ট্রাজেডি

জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে দোকানে কাপড় তুলেছিলেন মাগুরার মহম্মদপুরের দবির হোসেন

আপডেট টাইম : ০৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
মো. কামরুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি, মাগুরা :

গত দুই বছরের করোনার কারণে ব্যবসা ভাল হয়নি। প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ঢাকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী দবির হোসেন। এবারের ঈদে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ধারদেনা করে নিজের দু’টি দোকানে অনেক কাপড় তুলেছিলেন। কিন্ত গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ওই বাজারে ভয়বহ অগ্নিকান্ডে তার স্বপ্ন মিশে যায় আগুনের ধোয়ায়। ওই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজারের প্রায় চার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার মধ্যে দবির হোসেনের ছিল দুটি দোকান। যার সবটুকু ছাই হয়েছে আগুনে পুড়ে। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সেখানে নতুন করে ব্যবসা সাজাতে ঢাকায় থেকে দবির হোসেন প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘুল্লিয়ায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন দবিরের ৬ সদস্যের পরিবার।

৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর কমপ্লেক্স বঙ্গবাজার কাপড়ের মার্কেটে ভয়বহ অগ্নিকান্ডে তিন হাজারের অধিক কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা দোকান ভষ্মিভূত হয়। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এক ব্যবসায়ীর বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামে। তার নাম দবির হোসন। তিনি ২০ বছরের অধিক সময়ধরে বঙ্গবাজারে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। বিগত দুই বছরের করোনা ও রাশিয়া এবং ইউক্রেণ যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশ ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্যদের মত দবিরের ব্যবসাও ভাল যায়নি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গ্রামে এসে ৪৫ শতাংশ জমি বিক্রি এবং বিদেশগামী বোন জামাইয়ের যাত্রা পিছিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে এবারের ঈদে ভরপুর পোষাক তুলেছিলেন নিজের দুটি দোকানে। কিন্তু ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে তিনি সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছেন। কি করে আবার সেখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন তাও তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী দবির হোসেনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায় তাদের দু:খে ভরা গল্প কথা। স্ত্রী, মা ও চার সন্তানসহ ৭ সদস্যের পরিবার দবির হোসেনের। তবে তার বাড়িতে আসার সুযোগ খুব কম হয়। তার স্ত্রী সাফিয়া পারভীন পরম যত্নে সংসার পরিচালনা করেন। স্বামীর ব্যবসার পাশাপাশি তিনি শেলাই মেশিনে কাজ করেন। কারন, স্বামীর পাঠানো টাকা দিয়ে সংসার ঠিকমত চলে না।

মা জোহরা বেগম বয়সের ভারে আক্রান্ত এবং অসুস্থ্য হয়ে শয্যাশায়ী, বড় মেয়ে মরিয়ম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, মেজো মেয়ে সায়েমা ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী, ছোট মেয়ে মারিয়া মাদ্রায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া-লোখা করে। ছোট ছেলে সোয়াদের বয়স কেবল পাচ বছর। দবিরের পাঠানো টাকা এবং শেলাই মেশিণে উপার্জিত অর্থ দিয়েই খুব হিসাব করে সংসার পরিচালনা করতে হয় স্ত্রী সাফিয়া পারভীন কে। তবে এবারের ঈদ তাদের কেমন কাটবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ছেলে মেয়েদের জন্য ঢাাকা থেকে এবার নতুন পোষাক আসার কোন সুযোগ নেই। সেটাও তারা মেনে নিতে পারবে বলে জানান মেয়েরা। কিন্তু ঢাকা থেকে টাকা না পাঠালে সংসার চলবে কিভাবে তা নিয়ে দুশ্চিনায় আছেন মা সাফিয়া পারভীন।

বড় মেয়ে মরিয়মের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কেঁদে ফেলেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। আমাদের আব্বু সুস্থ আছেন এর জন্য আমি মহান আল্লার দরবারে শুকরিয়া জানায়। আল্লাহ সহায় হলে আমার আব্বু আবার নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। মা সাফিয়া খাতুন বলেন, যতই কষ্টো হোক দু:সময়ে আমার সন্তানদের আমাকেই ভাল রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ দবির হোসেন বলেন, তার দু’টি দোকান পুড়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে সরকারে সহযোগিতা ছাড়া হবে না। তবে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের সহযোগিতায় নিশ্চই আমরা উঠে দাড়াবো।

ইউএনও রামানন্দ পাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে ঈদের আগেই সহযোগিতা করা হবে।

 


প্রিন্ট