দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রবন্দর। এ বন্দর পুরোদমে চালু হলে ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই ইউরোপ এবং আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন ব্যয় কমবে ৩০ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানিতে সময় বাঁচবে ১০ থেকে ১৪ দিন। এতে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব। ২০২৬ সালে এ বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে ১৬ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়বে গভীর সমুদ্রবন্দরে। ফলে ট্রানজিট ভোগান্তি ছাড়াই বিভিন্ন বন্দরে সরাসরি পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে আমাদের আমদানি-রপ্তানিতে সময় বাঁচবে। এখান থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির কারণে আমাদের প্রতি বছর ৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। বিভিন্ন দেশ এ বন্দর ব্যবহার করার কারণে আয় হবে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হবে দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। এ বন্দর চালু হলে আমদানি-রপ্তানিতে পরিবহন ব্যয় কমবে এবং সময়ও বাঁচবে। এতে দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। প্রচুর আয় হবে।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগারের উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর মাতারবাড়ীর হাজারো একর ভূমিতে ২০২০ সালে শুরু হয় গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজ। এরই মধ্যে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। চ্যানেলের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য চলছে ড্রেজিং। শেষ হয়েছে ঢেউ নিরোধক বাঁধ।
এরই মধ্যে সিভিল ওয়ার্কস ফর পোর্ট কনস্ট্রাকশন, কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম টাগ বোট, সার্ভে বোট এবং পাইলট বোট ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য তৃতীয় কোনো দেশের সমুদ্রবন্দরকে ব্যবহার করতে হয় ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দর ব্যবহার করছেন ট্রানজিট বন্দর হিসেবে। তৃতীয় দেশ হয়ে আমদানি-রপ্তানি করার কারণে একদিকে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি আমদানি-রপ্তানি সময় বেড়ে যায় ১০ থেকে ১৪ দিন।এ সমস্যা থেকে উত্তরণ পেতে সরকার মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়।
দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ীকে অত্র অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রাবন্দর গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহন করবে। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ এ বন্দর ব্যবহার করবে। এতে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব। আশা করা হচ্ছে ছাড়িয়ে যাবে সিঙ্গাপুরকেও। গভীর এ সমুদ্রবন্দরে থাকবে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি, ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার বার্থিং জেটি। ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতাবিশিষ্ট ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল। উত্তরদিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউ নিরোধক বাঁধ।
প্রিন্ট