বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) হাতিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষকদের দিনব্যাপি (৯টা থেকে প্যাঁচটা) ‘ইনডাকশান’ প্রশিক্ষন শুরুর দুই ঘন্টা পর শেষ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন সকাল সাড়ে নয়টায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসি) এ প্রশিক্ষন শুরু হয়। সকাল সাড়ে এগারোটায় প্রশিক্ষনের সমাপ্তি ঘোষনা করেন প্রশিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান । অপর প্রশিক্ষক ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন এদিন অনুপস্থিত ছিলেন।
শনিবার( ৮ এপ্রিল) প্রশিক্ষক কামরল হাসানের অনুপস্থিতিতে প্রশিক্ষক আকবর হোসেন একাই প্রশিক্ষন পরিচালনা করেন। রবিবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে না থাকলেও দুপুর দুইটা পাঁচ মিনিটে প্রশিক্ষক কামরুল হাসান প্রশিক্ষন কক্ষে প্রবেশ করেন এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। শনিবারের হাজিরায় তিনি অনুপস্থিত বা উপস্থিতি না দিয়ে খালি রেখে দেন।
পুরো প্রশিক্ষন ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি এমনটা করেছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবেই চলছে দায়সারা প্রশিক্ষন।
প্রশিক্ষনে অংশগ্রহনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রশিক্ষনার্থী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র এ সব খবর নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি৪) আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নব নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলার ২৫ জন সহকারি শিক্ষকের দশ দিনব্যপি ইনডাকশন প্রশিক্ষনের প্রথম ব্যচের প্রশিক্ষন ২৯ মার্চ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ছিলো প্রশিক্ষনের নবম দিন। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন অনুপস্থিতিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল । শনিবার থেকে ২৪ জন প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় ব্যচের প্রশিক্ষন। এ দিন প্রশিক্ষক কামরুল হাসানের অনুপস্থিতিতে প্ৰশিক্ষক আকবর হোসেন একাই দিনব্যপি প্রশিক্ষন পরিচালনা করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক(প্রশিক্ষন) মো: মাহবুবুর রহমান বিল্লাহর ২৭ মার্চ স্বাক্ষরিত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রশিক্ষন পরিচালিত হবে। ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্বাচিত একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন।
কেন বৃহস্পতিবার পাঁচটার পরিবর্তে সকাল সাড়ে এগারোটায় প্রশিক্ষনের সমাপ্তি টানা হলো এ প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান বলেন, আমি ছুটিতে বাড়িতে এসেছি, শনিবার ফিরবো।
|
এ ব্যাপারে আলাপকালে ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন বলেন, “এদিন উনি সামান্য একটু আগে ইউআরসি ত্যাগ করেছেন । এতে তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।”
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নোয়াখালীর মাইজদি পিটিআইর সুপারিনটেনডেন্ট শেপাল চন্দ্র নাথ বলেন, “এমন তো হওয়ার কথা নয় । আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
প্রশিক্ষনার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানাযায়, দীর্ঘ দিন থেকে ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান বিভিন্ন প্রশিক্ষনের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সমঝোতা বা ভাগাভাগির মাধ্যমে। একজন প্রশিক্ষনে উপস্থিত থাকলে অপরজন ছুটি ছাড়াই বাড়িতে চলে যান। এতে ফাঁকিবাজির এসব প্রশিক্ষনে শিক্ষকরা তেমন কিছু অর্জন করতে পারছেন না। বিগত ২০২২ খ্রি: অনুষ্ঠিত গণিত প্রশিক্ষনগুলোতো হাজিরা খাতায় প্রশিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসানের উপস্থিতির কোন স্বাক্ষর নেই।
তবুও তিনি প্রতি প্রশিক্ষন থেকে ৭২০০ টাকা হারে সন্মানী নিয়েছেন। ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর আকবর হোসেন প্রশিক্ষন কেন্দ্রে থাকেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান ৫০০ গজ দূরে থাকলেও উনারা প্রতি প্রশিক্ষন থেকে ১২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা পেয়ে থাকেন।
হাতিয়া ইউআরসিতে প্রশিক্ষকগন ভাগাভাগিতে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে আলাপকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, একজন অন্যজনকে দায়িত্ব দিয়ে স্থান ত্যাগ করার নিয়ম নাই। বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো।
প্রিন্ট